অনলাইন ডেস্ক: পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। নির্দিষ্ট সময় পর কারো কারো লিঙ্গ পরিবর্তন হওয়ার কথা আমরা শুনেছি। তবে এর সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু ডমিনিকান রিপাব্লিকের সালিনাস নামের গ্রামে একটা বয়সের পরে অনেক নারীরা পুরুষে রূপান্তরিত হয়।
ওই গ্রামে মেয়ে হিসেবে জন্মগ্রহণ করার পরে তাদের ১২-১৩ বছর হলে পুরুষে রূপান্তরিত হয়। ব্যাপারটা শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, এমন ঘটনা সত্যিই ঘটে সালিনাস গ্রামে। মেয়ে হিসেবে জন্ম নেওয়া একটি বাচ্চা তার কৈশোরে পৌঁছে পরিণত হয় ছেলেতে। সালিনাসের অনেক মেয়েই একটা বয়সের পরে একেবারে শারীরিকভাবে পাল্টে যায় পুরুষে।
আসলে এটা এক ধরনের শারীরিক ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। বাচ্চারা যখন গর্ভে থাকে, তখনই এই ত্রুটির প্রভাব দেখা দেয় তাদের শরীরে। একটি বিশেষ এনজাইমের অভাবেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। সাধারণত বাচ্চার গর্ভবাসের অষ্টম সপ্তাহ নাগাদ তার শরীরে যৌন অঙ্গ বিকশিত হওয়া শুরু হয়। ডিহাইড্রো টেস্টোস্টেরন নামের একটি হরমোনের প্রভাবে গর্ভস্থ শিশুদের পুং জননাঙ্গ পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এই হরমোনকে সক্রিয় করে তোলে একটি বিশেষ এনজাইম। কিন্তু সালিনাসের মায়েদের গর্ভকালীন পুষ্টির অভাবের কারণে এই এনজাইম তাদের গর্ভে যথেষ্ট বলবৎ হতে পারে না। ফলে যারা আসলে পুরুষ শিশু, জন্মের সময়ে তাদের পুরুষাঙ্গ ঠিকমতো গঠিতই হয়।
জন্মকালে এতটাই অপরিস্ফুট থাকে পুরুষ বাচ্চাদের জননাঙ্গ যে, বাবা-মায়েরা বুঝতেই পারেন না তাদের বাচ্চাটি আসলে ছেলে। মেয়ের মতো করেই বাবা-মা মানুষ করতে থাকেন তাকে। কিন্তু বছর বারো বয়সে যখন পুরুষ শরীরে দ্বিতীয় বারের জন্য টেস্টোস্টেরনের সময় আসে, তখন তাদের শরীরে ফুটে উঠতে থাকে পুরুষ লক্ষণ। তখন বোঝা যায়, বাচ্চাটি আসলে পুরুষ।
সালিনাস গ্রামের ২৫ বছরের পুরুষ জনি এই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন শৈশবে। তিনি জানালেন, ‘আমি ছোটবেলায় স্কুলে যেতাম স্কার্ট পরে। মাথায় থাকত বিনুনি। কোনওদিনই অবশ্য একটা মেয়ের মতো মনে হয়নি নিজেকে। কিন্তু বছর বারো বয়স থেকে আমার শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। আমি নিশ্চিত হয়ে যাই যে, আমি একজন পুরুষ।
জনির মতো মানুষ আরও অনেকেই রয়েছেন সালিনাসে। ১৯৭০ সালে এই গ্রামের এই অদ্ভুত পরিস্থিতির বিষয়টি প্রথম আবিষ্কার করেন ড. মাইকেল মোসলে নামের এক আবিষ্কারক। বিষয়টির নেপথ্যে রয়েছে এক নির্মম সত্য। সালিনাস দারিদ্র্যপীড়িত এবং মূল ভূখণ্ড থেকে দূরবর্তী একটি গ্রাম। সেই কারণেই পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে ভুগতে হয় গর্ভবতী মহিলাদের। আর তারই প্রভাব পড়ে গর্ভস্থ শিশুদের শরীরে।