এস,এম,আহম্মাদ উল্যাহ বাচ্ছু: কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি’র চালের কার্ড বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়াগেছে। এ ঘটনায় প্রকৃত হতদরিদ্র ব্যাক্তিরা বঞ্চিত হয়েছে এবং দেখা দিয়েছে হতাশা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঐ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বর রেজাউল ইসলাম হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি’র চালের কার্ড বিতরণে চরম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করেছেন। প্রকৃত দরিদ্ররা এই কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিত্তশালীরা এই কার্ডের চাল উত্তোলন করায় সরকারের কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি হতদরিদ্রদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। এলাকাবাসির অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর রেজাউল ইসলাম কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে নিজস্ব লোককে তালিকাভুক্ত করেছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে কার্ড দেয়ার নামে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২ থেকে ৩শ’ টাকা হারে উৎকোচ নিয়েছেন তিনি। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন জানা যায়, ১০ টাকা কেজি’র চালের কার্ড পেয়েছেন চালিতাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গফুর সরদারের ছেলে শরিফুল ইসলাম। তার ৬ বিঘা জমি রয়েছে। আছে পাকা বাড়ি। একই গ্রামের আকিমুদ্দীন গাজীর ছেলে ওয়াজেদ আলী গাজীর আছে ২ বিঘা জমি ও মাছের ঘের। মৃত ইসতুল্যা সরদারের ছেলে এবাদুল সরদারের আছে পাকা বাড়ি, ৪ বিঘা জমি ও ইটের ব্যবসা। মৃত আবুল কাশেম খানের ছেলে মুজিবর রহমান খানের আছে পাকা বাড়িসহ ৩ বিঘা জমি। রওশন গাজীর মেয়ে চায়না খাতুনের স্বামী বিদেশে কর্মরত। তার আছে পাকা বাড়ি ও ৪ বিঘা জমি। নূর মোহাম্মদ গাজীর ছেলে মনিরুল ইসলামের আছে পাকা বাড়ি, ৪ বিঘা জমি ও বড় মুদি দোকান। অপরদিকে আক্কাজ গাজীর ছেলে গফুর গাজীর নামে কার্ড তালিকাভুক্ত করা হলেও চালিতাবাড়িয়ায় ওই পরিবারের অস্তিত্ব নেই। মারকা গ্রামের শাহাজান মীরের স্ত্রী সাবিনা খাতুনকে কার্ড দেয়া হয়েছে। অথচ তার পাকা বাড়িসহ ১৫ বিঘার মাছের ঘের আছে। একই গ্রামের মৃত রজব আলী শেখের ছেলে লিয়াকত আলী শেখের রয়েছে পাকা বাড়ি, ১০ বিঘার মাছের ঘের ও মোটর সাইকেল। স্বরাব্দিপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ পাড়ের স্ত্রী সেলিনা বেগমের রয়েছে পাকা বাড়িসহ ৭ বিঘা জমি। একই গ্রামের মৃত মঙ্গল গাজীর ছেলে আব্দুল বারী গাজীর রয়েছে পাকা বাড়ি, ২ বিঘা জমি ও মুদি ব্যবসা। কুখাডাঙ্গা গ্রামের আমজিয়ার রহমানের ছেলে আনারুল ইসলামের রয়েছে পাকা বাড়িসহ ৪ বিঘা জমি। আরও অনেক ব্যক্তি অনিয়মের মাধ্যমে কার্ড পেয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে চালিতাবাড়িয়া গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুল মান্নান পাড়, তার স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় মেয়ে খাদিজা খাতুন, কুখোডাঙ্গা গ্রামের জিয়াদ গাজীর ছেলে দিনমজুর রবিউল ইসলামসহ অনেক নিঃস্ব ব্যক্তি ১০ টাকা কেজির চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দায়িত্ব প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রকৃত দুস্থ, হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধি ও ভিখারীদের মাঝে উক্ত চালের কার্ড বিতরণসহ ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বর রেজাউল ইসলাম কার্ড বিতরণে অর্থ নেয়ার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, কিছু ব্যক্তির কার্ড সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ফুড গোডাউনের কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করেছেন। সেখানে চেয়ারম্যান সাহেব, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী, নলতা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম সাহেবসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। পূণরায় যাচাই বাছাই করে কিছু নাম বাদ দিয়ে ও কিছু নাম যুক্ত করে নেতৃবৃন্দ নতুন তালিকা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাইলে ভাড়াশিমলা ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ বিশ্বাস বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) তদন্ত করেছেন। বড় ধরণের কোন অনিয়ম পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, মেম্বর রেজাউল ইসলাম সবাই মিলে তালিকা করেছেন। চাহিদার তুলনায় কার্ড স্বল্পতা থাকায় দু’একজন দরিদ্র মানুষ বাদ যেতে পারে পরে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য ওসিএলএসডি (কালিগঞ্জ) হুমায়ন বাসিত চৌধুরীর সঙ্গে মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।