ফিচার

কারাগারে খালেদা জিয়ার এক মাস

By Daily Satkhira

March 08, 2018

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাসের একমাস পূর্ণ হচ্ছে আজ ৮ মার্চ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়। ওই দিন থেকে তিনি রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে আছেন।

জেলসুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাঁর শারীরিক অবস্থার দিকেও নজর রাখা হয়েছে।

কারাসূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারা ভবনের ডে-কেয়ার সেন্টারের একটি সেলে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁর সঙ্গে তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমা রয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবারই তিনি খাচ্ছেন।

এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গতকাল বিকেলে দেখা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। এ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি সাহসিকতার সাথে সব প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করছেন। তিনি দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁর জন্য দোয়া করতে। খালেদা জিয়া আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে বলেছেন, সবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।’

খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) অটুট আছেন। তাঁর শরীর ভালো আছে। দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য তিনি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে তারাই ইচ্ছেকৃতভাবে অশান্তিপূর্ণ করার পাঁয়তারা করছে। দেশনেত্রী আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছেন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে কারো উপসকানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাওয়ার জন্য তিনি আমাদের বলেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিএনপি চেয়ারপারসন সবাইকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন।’

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যে নেতারা প্রবেশ করেন তাঁরা হলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় একইসঙ্গে ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানার আদেশ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

এর পরেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন। সেইসঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে এসে পৌঁছানোর পরই আদেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে তিনজন পলাতক। এই তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া,

তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।