ফিচার

এমসিকিউ থাকা না থাকা নিয়ে পরীক্ষার্থীসহ ৪ কোটি শিক্ষার্থী উৎকণ্ঠায়

By Daily Satkhira

March 11, 2018

অনলাইন ডেস্ক: চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাস হতে চলল। অথচ চূড়ান্ত পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনো জানাতে পারেনি শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কারণে আগামী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চরম উৎকণ্ঠায় আছেন। কেননা এই পাবলিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি শুরু করতে হয় আগেভাগেই।

তা ছাড়া এই পাবলিক পরীক্ষাকে ভিত্তি করেই অন্যান্য শ্রেণির পরীক্ষায় প্রশ্ন তৈরি ও নম্বর বিভাজন করা হয়। যদি পাবলিক পরীক্ষার এমসিকিউতে কোনো পরিবর্তন আসে, তাহলে সব শ্রেণির পরীক্ষায়ই সেই পরিবর্তন আসবে। সেই হিসাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীই তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকা না থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া এবারের এইচএসসি পরীক্ষা আপাতত এ আলোচনার বাইরে।

এদিকে শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাসেও প্রশ্ন ও নম্বর বণ্টন চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনো এসংক্রান্ত গাইডলাইন পাননি শিক্ষকরা। এ কারণে শিক্ষকরাও ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।

শিক্ষা খাতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রায় প্রতিটি বিষয়েই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ছিল। রচনামূলক অংশের প্রশ্ন ফাঁস না হলেও এমসিকিউ প্রশ্ন পাওয়া গেছে প্রতিটি পরীক্ষার আগেই। তাই আগামী বছর থেকে এসএসসিতে এমসিকিউ উঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ পরিস্থিতিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সভায় পিইসি পরীক্ষা থেকেও এমসিকিউ উঠিয়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়; যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) চলতি বছরের পিইসি পরীক্ষার যে চূড়ান্ত নম্বর বিভাজন প্রকাশ করে, তাতে এমসিকিউ রাখা হয়। ছয়টি বিষয়ের মধ্যে বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২৪, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৫০, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৫০ ও ধর্ম বিষয়ে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে ওই নম্বর বিভাজনে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

২৫ ফেব্রুয়ারির সভা শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় এমসিকিউ তুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। নকলমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা আয়োজন করতে সব চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে পরীক্ষা নিয়ে কোনো বিতর্ক না হয়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসএসসি পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন ফাঁস দেখে শঙ্কিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে পিইসি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হতে পারে। যেহেতু এমসিকিউ প্রশ্নই ফাঁস হচ্ছে, তাই মন্ত্রণালয় পিইসি পরীক্ষা থেকেও তা তুলে দিতে চাচ্ছে।

রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিফাতের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পিইসি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হয়। কারণ এখানেও তো জিপিএ ৫ আছে। আমরা এমসিকিউ ধরে নিয়েই বাচ্চাকে লেখাপড়া করাচ্ছি। অথচ এখন আবার বলা হচ্ছে এমসিকিউ থাকবে না। শিক্ষকরাও ঠিকমতো বলতে পারছেন না। তাহলে আমরা এখন কী করব?’

একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাজনীন আক্তার বলেন, ‘যদি এমসিকিউ না থাকে, তাহলে রচনামূলকের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। হয়তো রচনামূলকে নম্বর বাড়বে অথবা প্রশ্ন বাড়বে। কোনো একটি প্রশ্নে নম্বর বাড়লে সেটা আরো বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে। আবার প্রশ্ন বাড়লে সেটাও যথাসময়ে শেষ করতে হবে। বাচ্চাদের তো এটা শেখাতে হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পিইসি পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ বাদ দিয়ে কী ধরনের প্রশ্ন যুক্ত হবে, তা ঠিক করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও নেপকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর পর শিগগিরই বৈঠক করে এমসিকিউ তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষায় আরো কয়েকটি পরিবর্তন আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আবার আগামী এসএসসি পরীক্ষার্থীদের একাধিক অভিভাবক ২০১৯ সালের ওই পরীক্ষায়ও এমসিকিউ থাকবে কি না জানতে চেয়েছেন। কেননা এবারের এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এমসিকিউয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। তা ছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমসিকিউ তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।

এ ব্যাপারে অভিভাবকরা বলছেন, এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি মূলত নবম শ্রেণি থেকেই শুরু হয়। কারণ নবম-দশম শ্রেণিতে একই বই। আগামী বছরে যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী, তাদের নবম শ্রেণির প্রতিটি পরীক্ষায় এমসিকিউ ছিল। তাদের জন্য হঠাৎ করেই তা উঠিয়ে দিলে ফল ভালো হবে না। তাই যদি এসএসসির এমসিকিউয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে যারা আগামী বছর নবম শ্রেণিতে উঠবে তাদের জন্য নিতে হবে।

এদিকে এসএসসি ও পিইসি পরীক্ষার এমসিকিউ উঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনার মধ্যে দোলাচলে ভুগছে জেএসসি পরীক্ষার্থীরাও। কেননা ওই দুই পাবলিক পরীক্ষায় এমসিকিউ উঠে গেলে জেএসসি থেকেও উঠে যাবে। কিন্তু শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাসেও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো নির্দেশনা নেই জেএসসির শিক্ষার্থীদের কাছে।

ফলে আগামী পিইসি ও সমমানের প্রায় ৩০ লাখ, জেএসসি ও সমমানের ২১ লাখ এবং এসএসসি ও সমমানের প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর সবাই এমসিকিউ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে।

রাজধানীর কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্ বলেন, ‘আমাদের কাছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা প্রায়ই জানতে চাচ্ছে পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকবে কি না? কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর দিতে পারছি না। আমি মনে করি, শিক্ষাবর্ষের মাঝামাঝি হুট করে কোনো পরিবর্তন করা উচিত নয়। এমসিকিউ উঠিয়ে দিতে হলে সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে ভেবে এবং বিকল্প ব্যবস্থা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, তা সব সময় শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই নিতে হবে। সেটা না করলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, ‘এমসিকিউ চালু করা হয়েছিল পুরো বইটাকে পড়ার জন্য। কিন্তু এর সুযোগ কেউ কেউ অন্যভাবে নিচ্ছে। তাই তা তুলে দেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে শিগগিরই শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব।’

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব মত তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে মুফাদ আহমেদ বলেন, ‘এমসিকিউ তুলে দেওয়া হলে এর বিকল্পটা কী হবে, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আর শিক্ষার্থীদের সময় দেওয়ার ব্যাপারটাও আমাদের মাথায় আছে। কোন বছর থেকে নতুন পদ্ধতি চালু হবে, তা-ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’