জাতীয়

হজযাত্রী সেবার নামে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ!

By Daily Satkhira

March 11, 2018

হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবার নামে প্রতিবারই সরকারি চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের কেউ কেউ সৌদি আরব যাওয়ার জন্য অনৈতিক নানা পথ বেছে নেন। কেউ আবার নিজ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। গত বছর এমন পরিস্থিতি নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। এবার এমন পরিস্থিতি এড়াতে আগেভাগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এমনকি প্রথমবারের মতো নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের চাকরিজীবীদের জন্য তৈরি করেছে ‘হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা-২০১৮’। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা জারি করা হয়। গত দুই-তিন দিন হলো তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অধিদপ্তরে জানাজানি হয়। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, “ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘হজ ও ওমরা নীতি’ নামে একটি নীতিমালা রয়েছে। তবু আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হজযাত্রী স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করেছি। আশা করি, এই নীতিমালার আওতায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে উপযুক্ত জনবল নিয়েই হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা টিম গঠন হবে।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আগে এতটাই বিশৃঙ্খলা ছিল যে আমাদের মন্ত্রণালয়ের লোকজন এই মন্ত্রণালয়ের কোনো রকম অনুমোদন না নিয়ে, না জানিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছিল। এটা তো হতে পারে না।’ নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে হজযাত্রীরা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ই-মেডিক্যাল প্রফাইল তৈরি, বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক দেওয়া, কারো শারীরিক অযোগ্যতা শনাক্ত হলে সেই যাত্রীকে অনুপযুক্ততার সনদ দেওয়ার কাজগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ‘হজ ও ওমরা নীতি’ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দল গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্যসেবা দল’ বলতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মরত সরকারি চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মচারী সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক দল বা চিকিৎসা সহায়তা দলকে বোঝাবে। সৌদি আরবে হজযাত্রীর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা দল গঠন করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। নীতিমালা অনুসারে এবার থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চাহিদা পাওয়ার পর ১৫ দিনের সময় দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তরগুলো নিজ নিজ দপ্তরের আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন জমা দেওয়ার নোটিশ করবে। আগ্রহীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন দাখিল করবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ওই আবেদন বিবেচনা সাপেক্ষে অধিদপ্তরে সুপারিশ পাঠাবে। পরে একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি কমিটি ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। ওই কমিটি মনোনীতরা চূড়ান্ত হজ স্বাস্থ্যসেবা দল বলে গণ্য হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ওই কমিটির সভাপতি, একই বিভাগের যুগ্ম সচিব (সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) সদস্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তাদের প্রতিনিধিরা এই কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন।

নীতিমালায় বলা হয়, একবার কেউ হজ স্বাস্থ্যসেবা দলে সৌদি গিয়ে থাকলে তিনি পরেরবার আবেদন করতে পারবেন না। মনোনীত কোনো চিকিৎসক, নার্স বা অন্যরা কোনোভাবেই পরিবারের অন্য কাউকে সঙ্গে নিতে পারবেন না বা একত্রে অবস্থান করতে পারবেন না। আবেদনকারীর বয়স ৩৫-৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। আর চিকিৎসকদের মধ্যে উপজেলার বা তার নিচের পর্যায়ে কর্মরতদের এই দলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।