সাতক্ষীরা

লাবসা ইউপি চেয়ারম্যান অর্ধকোটি টাকা আত্মসাথ করেও বহাল তবিয়তে ॥ তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা

By daily satkhira

March 11, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ উত্তোলন করে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাথ করেও বহাল তবিয়তে লাবসা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম। এঘটনায় লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন দূশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নবাসী। এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যমতে, লাবসা ইউনিয়নের আওতাধীন বিনেরপোতা হাট ইজারা হতে ৪৬ % পান ইউনিয়ন পরিষদ। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে প্রতিবছর একটি বড় অংকের অর্থ জমা হয়। তবে চলতি বাংলা ১৪২৪ সালে বিগত দিনের সকল রেকর্ড ভেঙে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী মোট টাকার ৪৬% লাবসা ইউপিতে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এবার বিনেরপোতা হাট থেকে ৩৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৭২৩ টাকা। যা ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক বিধি বিধান অনুযায়ী ব্যয় করার কথা থাকলেও সেখানে এ নিয়মের কোন তোয়াক্কা করা হয়নি। বিভিন্ন ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে, একই কাজ বার বার দেখিয়ে এবং ভুয়া রেজুলেশন করে গত ১৩ জুন ২৩২৪০৭৪ নং চেকে উক্ত ৩৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৭২৩ টাকা উত্তোলন করেন ইউপি চেয়াম্যান আব্দুল আলিম ও ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাক। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে উক্ত টাকার কোন প্রকল্পই বাস্তবে রূপ পায়নি। পুরো টাকাটাই ইউপি চেয়ারম্যান ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাকের সহযোগিতায় পকেটস্থ করেছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানাগেছে। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় অবস্থিত হাট বাজারের ইজারা থেকে সদরের ১৪টি ইউনিয়নের হাট বাজার সংস্কার বাবদ ১৫% টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়। সে অনুযায়ী লাবসা ইউনিয়ন পরিষদ ১৫% হিসাবে বিনেরপোতা হাট সংস্কারের জন্য ১২লক্ষ ১৫ হাজার ৮৮৮ টাকা বরাদ্ধ পান। উক্ত বরাদ্দ পত্রে মোট ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে বিনেরপোতা হাটের কাপেটিং রাস্তা হতে ছোট’র আড়ৎ পর্যন্ত রাস্তা কংক্রিট ঢালাই নির্মাণের জন্য ১লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা, বিনেরপোতা হাটের ছোট’র আড়ৎ হতে অজিত বাবুর আড়ৎ পর্যন্ত কংক্রিট ঢালাই নির্মাণ ১লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা, বিনেরপোতা হাটের অজিত বাবুর আড়ৎ হতে অতিষের আড়ৎ পর্যন্ত রাস্তা কংক্রিট ঢালাই নির্মাণ ১লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা, বিনেরপোতা হাটের অতিষের আড়ৎ হতে তপন বাবুর আড়ৎ পর্যন্ত রাস্তা কংক্রিট ঢালাই নির্মাণ ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৮৮ টাকা, ৫. বিনেরপোতা হাটের কণ্ঠ’র আড়ৎ হতে লিয়াকতের আড়ৎ পর্যন্ত রাস্তা কংক্রিট ঢালাই নির্মান ১লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা, বিনেরপোতা হাটের তপন বাবুর আড়ৎ হতে সাতক্ষীরা ফিস পর্যন্ত রাস্তা কংক্রিট ঢালাই নির্মান ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও বিনেরপোতা হাটের সাতক্ষীরা ফিস হতে মিজানের আড়ৎ পর্যন্ত রাস্তা কংক্রিট ঢালাই নির্মাণ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। উক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের শর্ত স্বাপেক্ষে গত ০৫ ডিসেম্বর১৭ তারিখে ২৮৭৭৭১৫ নং চেকে ১২লক্ষ ১৫ হাজার ৮৮৮ টাকা উত্তোলন করেন ইউপি চেয়ারম্যান। অথচ টাকা উত্তোলনের ২ থেকে আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও বিনেরপোতা হাটে ৭টি প্রকল্পের একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। হরিলুটের ঘটনায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন পত্রিকাসহ আঞ্চলিক পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নটক নড়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের। এরপর গত ২৬ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ খান তদন্ত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে যান। কিন্তু সেখানে ইউপি সদস্যবৃন্দ চেয়ারম্যান কর্তৃক ৪৯ লক্ষ টাকা দুর্নীতির বিষয়ে অবগত করালে তিনি নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বললে মেম্বরসহ স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে অবশ্যই এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে শান্ত হন তারা। সেসময় তিনি বলেন, আমার অফিসিয়াল নিয়মে জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ পরির্দশন করতে হয়। সে রুটিন মাফিক আমি লাবসা ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে চেয়ারম্যান কর্তৃক অর্ধকোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা বা অভিযোগ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা ছিলো না। তদন্তের জন্য আসা হয়নি। বা সরকারও আমাকে দায়িত্ব দেয়নি। এখানে এসে জানতে পেরেছি। এ অভিযোগ আমি আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানাবো তারা যে নির্দেশনা দিবেন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে ইউপি সচিব ও সদস্যবৃন্দ উক্ত প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে ডিডিএলজির সামনে লিখিত মতামত ব্যক্ত করেন। অপরদিকে উক্ত প্রকল্পের কাগজপত্রের বিষয়ে ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাকের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ৩৭ লক্ষ টাকা এবং হাটের ১২ লক্ষ টাকার প্রকল্পের সকল ফাইল আমার নিকট থেকে চেয়ারম্যান সাহেবের নিকট নিয়ে নেন। যার তার নিজ হেফাজতে আছে। পরিদর্শনকারে ডিডি এলজি এঘটনার তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাসও প্রদান করেন। অথচ ঘটনার প্রায় ১২ দিন অতিবাহিত হলেও উর্দ্ধতন মহলের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে না পড়ায় হতাশ হয়েছেন ইউনিয়নবাসী। এদিকে অর্ধকোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ খান বলেন, এঘটনায় তদন্তের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তহমিনা সুলতানা বলেন, আমি কাগজপত্র পেয়েছি। আমি তদন্ত করে বিষয়টি দেখবো। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, অভিযুক্ত হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। উন্নয়নের টাকা নিয়ে কেউ আত্মসাত করবে সেটি হতে পারে না। দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

১১.০৩.২০১৮