জাতীয়

তামিম চৌধুরীর নির্দেশে হলি আর্টিজানে হামলা

By Daily Satkhira

March 12, 2018

অনলাইন ডেস্ক: নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরীর নির্দেশেই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। টার্গেট নির্ধারণ করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জঙ্গি তানভীর কাদেরির ভাড়া বাসায় ওঠেন তামিমসহ ৯ জঙ্গি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সেখান থেকে আসামিরা হলি আর্টিজানে হামলা চালায়। লালবাগে জঙ্গি অভিযান মামলার চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার চার্জশিটে এক কিশোরসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় বৃহস্পতিবার দুটি চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। মঙ্গলবার মামলার ধার্য তারিখে চার্জশিট দুটি আদালতে দাখিল করা হবে। আদালত সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। চার্জশিটে বলা হয়, ২০১৪ সালে হজ পালন করার পর তানভীর কাদেরি ও আবিদাতুল ফাতেমা নামাজ-কালেমার দিকে বেশি মনোযোগী হন। তানভীর উত্তরার একটি মসজিদে নামাজ পড়াতেন। সেখানে জঙ্গি মুসা ও জঙ্গি মেজর জাহিদের (মৃত) সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনজনের মধ্যে মতের মিল হয়। এরপর মেজর জাহিদের মাধ্যমে তানভীর নিউ জেএমবিতে যোগ দেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে তানভীর ও তার স্ত্রী আবিদাতুল ফাতেমা নিউ জেএমবির বায়াত গ্রহণ করেন। নিজের ব্যবহৃত গাড়ি সাড়ে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে তানভীর স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ হিজরতে বের হন। তারা প্রথমে রাজধানীর পল্লবীতে বাসা ভাড়া নেন। সেখানে জঙ্গি বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেট ওরফে র‌্যাশ ওরফে রাশেদ (মৃত) আসত। তামিমের নির্দেশে বাসারুজ্জামানসহ তানভীর বসুন্ধরার আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নেন এবং পরিবারসহ ওঠেন। ওই বাসায় তামিম, তার সহযোগী নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান, নিবরাস, রোহান, মীর সালেহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও জাহাঙ্গীর ওঠেন। সেখান থেকেই আসামিরা হলি আর্টিজানে হামলা করে। হলি আর্টিজানে হামলার দিন তামিমের নির্দেশে তারা বসুন্ধরার আবাসিক এলাকার বাসা ছেড়ে পল্লবীর বাসায় চলে আসেন। এরপর রূপনগরে বাসাভাড়া নিয়ে তারা থাকা শুরু করেন। এরপর সেখান থেকে লালবাগে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। ওই বাসায় বাসারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন এবং মারজানের স্ত্রী প্রিয়তী অবস্থান করতেন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামি তানভীর ও তার স্ত্রী আবিদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা ওরফে আশা (৩৮) উভয়ই উচ্চ শিক্ষিত। তানভীর ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ও রবি এবং ফাতেমা সেভ দ্য চিলড্রেনে চাকরি করতেন। তাদের সন্তান তাহরীম দাদেরি ও আফিম কাদেরি উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে পড়ালেখা করত।

চার্জশিটে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর লালবাগের জঙ্গি আস্তানায় তল্লাশির সময় আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ করে। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে পুলিশকে আহত করা হয়। গুলিও করা হয়। পুলিশও আত্মরক্ষায় গুলি করে। একপর্যায়ে তানভীর আত্মসমর্পণ না করে নিজেই গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। লালবাগের স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে ২০৯/৫ লালবাগ রোডের হাজী মো. কায়সারের বিল্ডিয়ের দ্বিতীয়তলায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ দরজায় নক করলে তাদের লক্ষ্য করে কয়েকটি গ্রেনেড নিক্ষেপ ও কয়েক রাউন্ড গুলি করে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের বোমা ও ছুরিকাঘাতে পাঁচ পুলিশ আহত হন। শর্টগানের গুলিতে নারী জঙ্গি আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করলে তাহরিম কাদেরি ওরফে রাসেল (১৪) তাদের ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ তাকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলে। বাসায় তানভীরকে মৃত অবস্থায় এবং দুই জঙ্গি নারীকে ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে পুলিশ। এরপর পুলিশ দুই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাজধানীর লালবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে। মামলায় তানভীর, গ্রেফতার প্রিয়তী, ফাতেমা, শায়লা আফরীন, রাসেলকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আহসানুল হক মামলাটির চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের আগস্টে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার শাহ সুজা রোডের বাসায় তামিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা ৃচালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ডে’ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে এক জাপানি ও দুই শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।