অনলাইন ডেস্ক: বিমানের সিটের সামনের মনিটরে জিপিএস রুটম্যাপে বারবার তাকাচ্ছেন যাত্রীরা। ম্যাপে দেখাচ্ছিল ফ্লাইটটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরের আশপাশেই। অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হয় না। ম্যাপে এক ঘণ্টা ধরে একই স্থানে ঘুরছে বিমান।
ঘটনাটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাঠমান্ডুগামী ফ্লাইট বিজি-০০৭১ এর। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ছাড়ে ময়ূরপঙ্ক্ষী বিমানটি। কথা ছিল নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
ফ্লাইটটির বিজনেস ক্লাসে ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালসহ সিভিল এভিয়েশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছিলেন প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি সাংবাদিকসহ শতাধিক যাত্রী।
যাত্রীদের অধিকাংশই ইউএস-বাংলার ফ্লাইটে আহত-নিহতদের খোঁজখবর এবং সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডুতে যাওয়া। তবে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে হঠাৎ আসলো একটি ঘোষণা। বিমানের ক্যাপ্টেন বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, ভদ্র মহিলা ও মহোদয়গণ, আমরা ইতোমধ্যে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি। তবে আমাদের এখনও ল্যান্ডিং টাইম (অবতরণের সময়) দেয়া হয়নি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অতিরিক্ত ফ্লাই করে বিমানবন্দরে ল্যান্ড করতে পারব। গতকাল ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।’
বিমান দুর্ঘটনার পরের দিনের ফ্লাইটে এমন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা যায়। ওই ঘোষণার ১০ মিনিট পর আসে নতুন ঘোষণা। ক্যাপ্টেন বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, ভদ্র মহিলা ও মহোদয়গণ, আমরা ইতোমধ্যে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি এবং ল্যান্ডিং টাইম পেয়েছি। আমাদের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে অবতরণের কথা থাকলেও অবতরণে সময় দেয়া হয়েছে দুপুর ১টা ৫০ মিনিট। আশা করছি ১টা ৫০ অথবা দুপুর ২টার মধ্যে আমরা নিরাপদে কাঠমান্ডুতে অবতরণ করব।’
অবশেষে নেপালের আকাশে এক ঘণ্টা ঘোরাঘুরির পর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪৭ মিনিট এবং বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে বিমানটি নিরাপদে ত্রিভুবনে অবতরণ করে। দেড় ঘণ্টার ফ্লাইটটি নেপালে পৌঁছায় আড়াই ঘণ্টায়।
ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিধ্বস্তের পর এ ফ্লাইটের অনেক যাত্রীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। বিমান উড্ডয়নের সময় বিমানবালারা মোবাইল ও ট্যাব ব্যবহার করতে নিষেধ করলেও অনেকে তা ব্যবহার করেন। পরে যাত্রীরাই একে-অপরকে ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী ব্যবহার বন্ধ করতে বলেন। বিমান উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে এক যাত্রীর ফেসবুকে নোটিফিকেশন বেজে উঠলে অপর যাত্রী তার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন, ‘ফ্লাইটে মোবাইল ব্যবহারের কারণে ফ্রিকুয়েন্সি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের ম্যাসেজ স্পষ্টভাবে আদান-প্রদান করা যায় না। গতকাল এত বড় একটি দুর্ঘটনা হলো, এরপরও ফ্লাইটে নিষিদ্ধ কাজ করছেন।’
গতকাল সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে চার ক্রু ও ৬৭ আরোহী নিয়ে বাংলাদেশি ইউএস-বাংলার বিএস-২২১ ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়। এতে অর্ধশত যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। ঘটনাস্থলে মারা যান ৩২ জন। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১ যাত্রী। উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, একজন মালদ্বীপ ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। প্রাপ্তবয়স্ক ৬৫ এবং দুই শিশু ছিল।