অনলাইন ডেস্ক: কবির ভাবনার ‘সেদিন’ নয়, আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) ফাল্গুন পেরিয়ে অফিসিয়ালি শুরু হয়েছে বসন্ত ঋতুর দ্বিতীয়-পর্ব চৈত্র মাস। কবিগুরু বলেছিলেন, ‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস/তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’ চৈত্রের প্রখর খর দাহ ও ঝড়ের তাণ্ডবে সর্বনাশের বাঁশি কখন যে বেজে ওঠে, কে জানে! এ বছর ফাল্গুনী বাহারে চঞ্চল মধ্য ও শেষ দিনগুলোতেই থাবা হেনেছে চৈতালী উন্মত্ততা। ঝড়ো হাওয়ায় শিলাবৃষ্টি তছনছ করেছে ঢাকাসহ সারাদেশ। ভিজে গিয়েছিল বইমেলা, নাগরিক জীবন, নান্দনিক বিন্যাস। প্রকৃতিতে তাণ্ডবের প্রচ্ছন্ন ছাপ ফেলে ঝরে গেছে নব-অঙ্কুরিত আমের মুকুল, কচি শাখা, সতেজ পত্রালি। প্রকৃতি ও পরিবেশের আবহমানতায় বাংলাদেশে চৈত্র মাস রুদ্র বৈভব নিয়ে আসে। রূপ-রঙ-সৌরভের স্মৃতিময় ফাল্গুনকে বিদায় জানিয়ে তাপ ও দহনের গতিবেগে আসে চৈত্র। চৈত্র জানান দেয় কালবৈশাখীর আগাম বার্তা। দিগন্ত ছেয়ে কালো মেঘের আনাগোনায় ঘোষণা করে নতুন বছরের নতুন মাস বৈশাখের পদধ্বনি। চৈত্রের দাপটে ক্রমেই শেষ হয় মৃদুমন্দ উদাসী হাওয়ার মখমল-পেলব বসন্তদিন, স্বপ্নমেদুর রাত্রি আর রঙিন উৎসবময়তার চালচিত্র। দিন আর রাত্রে দামাল বাতাসের ছন্নছাড়া প্রতাপে চৈত্র অস্থির করে যাপিত জীবন। তপ্ত ও নিঃসঙ্গ দুপুরের ক্যানভাসে খাঁ খাঁ করে চরাচর। ফেটে চৌচির হয় ভূমিতল। হঠাৎ ঝড়ো-বৃষ্টির ছোঁয়ায় কিছুটা জলমগ্ন হলেও নিজের রুক্ষতাকে মোটেও আড়াল করে না চৈত্র। মধ্যাহ্নে একেলা পাখিটিও স্তব্ধ হয়ে ভুলে যায় কূজন। চারিদিকের গুমোট পরিবেশে না বলে চলে আসা ঝড়ের হাতছানিতে মনে পড়ে ভয়ঙ্কর সুন্দরকে। হলদে ধূসর শূন্যতার মাঝে কাটে চৈত্র-তাপিত বিষণ্ন জীবন। তাপদগ্ধ পাণ্ডুর অবয়বে চৈত্র টেনে নেয় প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবনকে; জীবনের যাবতীয় সবুজ ও সৌরভ। চৈত্র যেন শুষে নিতে চায় জলমগ্ন জীবনের সজল সুষমা। খাল, বিল, নদী, নালা আসন্ন বর্ষায় ভরপুর হওয়ার আগে নিঃশেষ হয় চৈত্রের দহনে। কখনো তীব্র খরার করাল গ্রাসে গ্রামবাংলার সামান্য সবুজ আর শ্যামলকেও রেহাই দিতে চায় না। ঘর্মাক্ত শরীরে মানুষ এবং দূরতম নীলিমার হাহাকার-চিল তাকিয়ে দেখে প্রকৃতির সর্বনাশা তাণ্ডব। রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’-এ উল্লেখিত যে বিখ্যাত উক্তি শুরুতে দেওয়া হয়েছে, কে জানে, ভরাচৈত্রে প্রেয়সীর চোখে কোন সর্বনাশের ছবি।