নিজস্ব প্রতিবেদক: মেলার শর্ত ভঙ্গ ও যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনের অভিযোগে অবশেষে সোমবার সকালে তালার ঐতিহ্যবাহী সিকান্দার মেলায় আগত আনন্দ অপেরা ও নিউ নিজাম পুতুল নাচের প্যান্ডেল ভেঙ্গে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে যাত্রা ও পুতুল নাচের নামে মধ্যরাতে অর্ধ নগ্ন নারীদের উদোম নৃত্য নিয়ে ছবিসহ সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে তানিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রবিবার রাতে পুতুল নাচ চলাকালীন তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরও চলতে থাকে আনন্দ অপেরার নামে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনী। তবে সোমবার সকাল ১০ টার দিকে এমন অভিযোগে তালা থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আনন্দ অপেরা, নিউ নিজাম পুতুল নাচ ও চিত্র তারকা মেলার প্যান্ডেলগুলি ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
দেশের প্রখ্যাত কবি সিকান্দার আবু জাফরের স্মৃতি রক্ষা ও পর্বণ প্রিয় বাঙালির ঐতিহ্যের সন্ধানে ২০১৭ সাল থেকে কবির গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালায় সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে সিকান্দার মেলা। এরআগে কবি পরিবারের পক্ষে ২০০১ সাল হতে ১৬’ সাল পর্যন্ত সিকান্দার মেলা চলে আসছিল। এজন্য প্রতি বছর মেলার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় হলেও তা অদ্যবধি কবির স্মৃতি সংরক্ষণ বা মেলায় দর্শনার্থীদের কবি সম্পর্কে ধারণা দিতে কতৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এতে একদিকে যেমন সিকান্দার আবু জাফর সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের অজানা থেকে যাচ্ছে তেমনি চিত্ত বিনোদনে বাণিজ্যিক প্রসারতায় নানা আয়োজনে মূল লক্ষ থেকে সরে ঐতিহ্য হারাচ্ছে তালাবাসীর প্রাণের মেলা সিকান্দার মেলা। প্রতি বারের ন্যায় এবারো তালার তেঁতুলিয়াতে আয়োজিত মেলায় কবির জীবনী ও সাহিত্য সংষ্কৃতি বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি তাঁর লেখা বই,গান,নাটক ও কবিতা প্রদর্শনের শর্ত থাকলেও বাণিজ্যিকিকরণের নানা পসরায় এবারো চাপা পড়েছে তা। সব মিলিয়ে মেলার সার্বিক আয়োজনে প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল তালা অঞ্চলের মানুষ। দেশের প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক সিকান্দার আবু জাফরের ৯৯ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বারের ন্যায় এবারো সরকারের সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমােদনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়াস্থ কবির জন্ম ভিটায় শুরু হয় সিকান্দার মেলা। এলক্ষে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতির পর আয়োজকরা গত ৯ মার্চ থেকে ১৫ দিন ব্যাপী শুরু হয় মেলাটি। সে অনুযায়ী ২৩ মার্চ পর্যন্ত চলার কথা ছিল তা। তবে এর ৫ দিন আগেই আয়োজকদের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় নানা সংকটে মেলার এবারের প্রাণ যাত্রা ও পুতুল নাচ বন্ধ হয়ে যায়। তবে সার্কাস নির্ভর মেলা কিভাবে তা ২৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে আয়োজকরা মেলার বর্ণাঢ্য বাস্তবায়নে কমিটি গঠন থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান সূচি, সিদ্ধান্ত, উদ্ভোধন, মাঠ ইজারা, অনুমোদিত ইভেন্ট ও ব্যবস্থাপনাসহ নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে চললেও মেলার প্রায় শেষ ভাগেও শুরু করতে পারেননি ব্যবস্থাপনার থ’ ক্রমিকের কবির জীবনী ও সাহিত্য সংস্কৃতির কোন আলোচনা বা সংশ্লিষ্ট কোন আয়োজন। এমন অবস্থায় সাহিত্য ও সংষ্কৃতি প্রেমী তালার সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলছেন, অঙ্কুরেই শেষ হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী তালার প্রাণের মেলা সিকান্দার মেলা। অন্যদিকে মেলার লাভ-ক্ষতির বিষয়টিকে সামনে রেখে তালাবাসীর মনে নতুন করে নানা আশংকা জেকে বসেছে। তাদের ধারণা, পুরনো পথেই নতুন করে এগিয়ে চলেছে সিকান্দার মেলা। সূত্র জানায়- উপজেলার সবুজ শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তেঁতুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দু’টিকে সামনে রেখে অনুমোদিত মেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠকে সম্পৃক্ত করলেও বাইরে রাখা হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি। আর মেলার মূল আয়োজন থাকছে কবি পরিবারেরই নিজস্ব ফসলি প্রান্তরে। এতে মাঠ ইজারার টাকা প্রাপ্তির বিষয়টি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। সূত্র আরো জানায়- এবার মেলার মূল মাঠ বিক্রি হয়েছে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায়। এতে ভ্যাট রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা, আর সরকারি অনুদান প্রায় ২ লাখ। তবে মেলা কেন্দ্রিক আয়ের এত উৎস্য তৈরী হলেও তা কবির স্মৃতি রক্ষা বা বর্তমান প্রজন্মের কাছে সিকান্দার আবু জাফরকে পৌছে দিতে মূলত কোন প্রভাব ফেলেনি। এদিকে দেশের একজন বরেণ্য কবির নামে শুরু হওয়া মেলাকে ঘিরে শুরু থেকেই ছিল নানা অভিযোগ। মেলায় আগত যাত্রা গান, পুতুল নাচে সংস্কৃতির নামে চলে আসছিল অশ্লীল উদোম নৃত্যের মহোৎসব। এজন্য কতৃপক্ষ অবশ্য দর্শক আকর্ষণকেই প্রাধান্য দিয়েছিল। তবে এবার মেলায় যাত্রা, পুতুল নাচ, সার্কাস, নাগর দোলা সহ বাহারি পসরায় দোকানিদের আগমনেও দর্শক সমাগম করতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, অসামাজিক নানা ঘাটতি মেলায় দর্শক শূণ্যতার কারণ। তবে এলাকাবাসীর দাবি ভিন্ন। তারা বলছেন, অশ্লীলতাই শূণ্যতার জন্য দায়ী। সিকান্দার মেলায় সিকান্দারকে নিয়ে কোন আয়োজন না থাকায় ভিঁড় নেই বর্তমান প্রজন্মের জ্ঞানপিপাসুদের। এলাকাবাসীর আশংকা, এমনটি চলতে থাকলে অনেক ঐতিহ্যবাহী মেলার ভিড়ে হারিয়ে যাবে প্রাণের সিকান্দার মেলাও। এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রথমত কবি পরিবারের পক্ষে ২০০১ সাল হতে ১৬’ পর্যন্ত মেলা চালিয়ে গেলেও ব্যাপক গণ দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সাল থেকে প্রথম বারের মত সরকারিভাবে কবির জন্ম বার্ষিকীকে সামনে রেখে চালু হয়েছে সিকান্দার মেলার আয়োজন। এলাকাবাসী আরো জানায়,মেলাটির শুরুতে ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে আবাল,বৃদ্ধ,বণিতাদের ব্যাপক সমাগম পরিলক্ষিত হলেও বর্তমানে অশ্লীলতা নির্ভর মেলা রীতিমত দর্শক হারাতে বসেছে। এ ব্যাপারে মেলার সদস্য সচিব শেখ মোসফিকুর রহমান মিলটন’র কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপ-কমিটি ও স্থানীয় সমন্বয়কারী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে মেলার মাঠ ইজারাদার সাইফুল জানান,এবারের মেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছেন। জুয়া বা লটারী চালু না করলে কোন ভাবেই তার লগ্নির টাকা উশুল হবেনা। এরপর যাত্রা ও পুতুল নাচও বন্ধ করে দেয়ায় তার প্রায় সমুদয় লগ্নি ভেস্তে যাচ্ছে। এব্যপারে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান- মেলায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা তিনি বা পুলিশ সমর্থন করেনা। তাদের কাছে মেলায় আগত যাত্রা ও পুতুল নাচের নামে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শণের অভিযোগ আসায় এবং এনিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশে তারা ঐ প্যান্ডেলগুলি পন্ড করে দিয়েছেন।