ফিচার

ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস; বড় বিপদে ফেসবুকের জনক

By Daily Satkhira

March 23, 2018

গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি এবং তা ট্রাম্প শিবিরকে দেওয়ার ঘটনা প্রকাশের পর তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। এ ঘটনায় বক্তব্য জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে চিঠি দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় কমিটি জানিয়েছে, তারাও অভিযোগের জবাব পেতে জাকারবার্গকে কংগ্রেসে ডাকবে। এ নিয়ে ফেসবুক জনক এখনো চুপ। তিনি শুক্রবার অভিযোগের একটা জবাব দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অভিযোগের কেন্দ্রে আরো আছে ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প শিবির প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া করে। প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুকের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রোফাইল থেকে পাওয়া তথ্য, কে কী পছন্দ করে, কোন স্ট্যাটাসে লাইক দেয়, কোন গ্রুপের সদস্য—সব তথ্য জোগাড় করে তুলে দেয় ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির হাতে। অ্যানালিটিকা এ তথ্য জোগাড় করেছিল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলেকজান্ডার কোগানের তৈরি অ্যাপ ‘দিস ইজ ইওর ডিজিটাল লাইফ’ দিয়ে, যা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল খোদ ফেসবুক।

ট্রাম্পের জয়ের পেছনে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বড় ভূমিকা ছিল বলে অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন। শুধু তাই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পেছনে যে গণভোট (ব্রেক্সিট) হয়েছিল, তার পেছনেও সংস্থাটির ভূমিকা ছিল। ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গের কাছে এসব অভিযোগের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়েছে। সাম্প্রতিক সংকটের পর মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার সদর দপ্তরে ফেসবুককর্মীদের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন না জাকারবার্গ। তাঁর পরিবর্তে ডেপুটি জেনারেল পল গ্রেভালের নেতৃত্বে বৈঠকটি হয়।

ডাটা ফাঁস নিয়ে এখন ঝড় বইছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি ভারত পর্যন্ত! মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় কমিটির ডেমোক্রেটিক সিনেটর ডিয়ানি ফেইনস্টেইন বলেছেন, গ্রাহকদের তথ্য বিষয়ে ফেসবুকের অবস্থান সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য জাকারবার্গকে কংগ্রেসে আসতে হবে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন ড্যামিয়ান কলিন্স এমপি। তিনি হাউস অব কমন্সের কালচার কমিটির চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার গভীর রাতে এক টুইটে কলিন্স লিখেছেন, ফেসবুক জানত দুই বছর আগে কী ঘটেছিল। অথচ পত্রিকায় খবর আসার পরই কেবল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল ফেসবুক। মার্ক জাকারবার্গকে এ বিষয়ে জবাব দিতে হবে। জাকারবার্গকে লেখা চিঠিতে ২৬ মার্চের মধ্যে এর জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কলিন্স। ব্রিটেনের তথ্য কমিশনার এলিজাবেথ ডেনহ্যাম জানিয়েছেন, ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানানো হবে।

এ ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে ফেসবুক ও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। পাশাপাশি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে ফেসবুক তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে অ্যানালিটিকা ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন অ্যালায়েন্সকে (এসসিএল) বের করি দিয়েছে। এর পরও চলতি সপ্তাহে স্টক মার্কেটে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্য হারায় ফেসবুক।

জানা যায়, অধ্যাপক কোগানের অ্যাপটি মূলত ব্যক্তিত্ববিষয়ক পরীক্ষা চালাত। দুই লাখ ৭০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই অ্যাপ ডাউনলোড করলেও তাদের বন্ধু তালিকার সবার তথ্যই কোগান হাতিয়ে নেন। ব্যবহারকারীদের অবস্থান, তাদের ফেসবুক বন্ধুদের তথ্য, তারা কী কী পোস্টে ‘লাইক’ দিত—সব অ্যাপ দিয়ে সংগ্রহ করা হয়।

খবরটি সারা বিশ্বের ফেসবুক ব্যবহারকারীকেই কমবেশি নাড়া দিয়েছে। ফেসবুকে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। দেশটির তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী গতকাল বুধবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতাকে এখনো পর্যন্ত ওই তথ্য চুরির প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। কিন্তু এমন একটা ভয়ানক ঘটনার পর আমি তাদের জানাতে চাই—ভারতে এমন ঘটনা ঘটলে সহজে ছাড় পাবেন না।’

বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে হোয়াটসঅ্যাপের সাবেক কর্মকর্তা ব্রায়ান অ্যাকটনের টুইট। গতকাল সকালে অ্যাকটন #ডিলিটফেসবুক হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেন, ‘সময় হয়েছে ফেসবুককে বিদায় জানানোর।’ ২০১৪ সালে ১৬০০ কোটি ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয় ফেসবুক। অবশ্য অ্যাকটন মাসখানেক আগে সিগনাল নামে হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি অ্যাপে পাঁচ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কেলেঙ্কারি ফেসবুকের বিশ্বাসযোগ্যতা কমাবে। সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো আলেকাজান্ডার কোগান যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, তা ফেসবুকের নীতিমালাতেই ছিল।

এই ঘটনার বিশ্লেষকরা নতুন করে সাবধান করিয়ে দিয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। তাঁরা বলছেন, ‘রেগে গেলে আপনি কোন প্রাণীর মতো হয়ে যান’, ‘আপনি দেখতে কোন বলিউড অভিনেতার মতো’ কিংবা ‘কোন বন্ধু আপনাকে গোপনে ভালোবাসে’—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ব্যবহারকারীরা তাদের অনেক তথ্যই তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিচ্ছে।