দেবহাটা

দেবহাটার এক যুবলীগ নেতা ও চোরাকারীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

By daily satkhira

March 23, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেবহাটা যুবলীগের সভাপতি মিন্নুর ও নব্য আওয়ামী লীগার চোরাকারবারি নূর আমীন গাজীর অনিয়ম, দূর্ণীতি ও ষড়যন্ত্রের প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সস্মেলন করেন দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ি তপন বিশ্বাস। তপন বিশ্বাস লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, উপজেলার পারুলিয়া বাসস্টাণ্ডে তার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামসহ সাত শতক জমি রয়েছে। ওই জমিতে থাকা গুদামঘরটি দু’ দফায় ২০০৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের রাধানগরের মাহাবুব বিশ্বাসকে ভাড়া দেন। ভাড়া সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে নুর আমিন সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করেন। ভাড়া দেওয়ার গুদাম ঘরের পার্শ্ববর্তী চার শতক কেনা জমি তিনি একই এলাকার শেখ আবুল হোসেনের কাছে ১৯৯৭ সালে বিক্রি করেন। ওই চার শতক জমি বর্তমান মাঠ জরিপে নিজ ১৮০০ ডিপি খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত করে তার (তপন) রেকডীয় প্রায় এক শতক জমি জবরদখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে শেখ আবুল হোসেন। এ নিয়ে তিনি দেওয়ানী আদালতে মামলা করেন। এরপরও নূর আমিনের ইন্ধনে ২০১৫ সালের ২৩ জুন শেখ আবুল হোসেন, তার সহযোগিরা তার ভাড়া দেওয়া গুদামঘরে এমআর ফিসের ঘরে তালা ঝুলিয়ে সামনে পলাশ এন্টারপ্রাইজ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাকে জায়গা বুঝিয়ে দিলেও উপজলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর শালিসে উভয়পক্ষকে ডেকে মধ্যস্ততার নামে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক চারটি সাদা অলিখিত কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেন। এ ঘটনা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানালে আবুল হোসেন, নূর আমিন ও মিন্নুর পরিকল্পনা করে পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান প্রিন্সকে দিয়ে তার ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৫ আগষ্ট আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করান। একইভাবে নূর আমিন ও মিন্নুর তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে না পাওয়ায় ছেলে দৈনিক প্রজন্মের ভাবনা পত্রিকার দেবহাটা প্রতিনিধি অনুপ বিশ্বাসকে টেকনাফ থানার একটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলার(১৯২/১৫) ভূয়া ওয়ারেন্টে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর গ্রেফতার করিয়ে জেলে পাঠান। সাতক্ষীরার কয়েকজন সাংবাদিকের সক্রিয় ভুমিকার কারণে সে যাত্রায় রেহাই পেলেও জমি জবরদখলের প্রক্রিয়া অব্যহত রাখেওই মহলটি। জ াতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসকের দেওয়া পৃথক তদন্ত প্রতিবেদনে আবুল হোসেন যে তার প্রায় এক শতক জমি জমি জবরদখল করার পরও গুদামঘরসহ পার্শ্ববর্তী জায়গা জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন তা প্রমাণিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এক জমি দু’বার দখল করার লক্ষ্যে যুগ্ম জজ আদালতে গত ১৫ নভেম্বর । আবুল হোসেনের পক্ষে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ১৩ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন । ওই গুদামঘর ও জমি জবরদখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর অভিযোগ করলে পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়েও কোন ব্যবস্থা নেননি দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন। ফলে ৩০ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে নুর আমিন, তাজুল ইসলাম, শেখ আবুল হোসেন, তার শ্যালক মেহেদী হাসান উত্তম ও রুবেলসহ ২৫/৩০ জন নারী ওই গুদাম ঘর দখল করে নেন। বিষয়টি দেবহাটা থানাকে অবহিত করলে পুলিশ সন্ধ্যায় জবরদখলকারিদের সরিয়ে দিয়ে তার(তপন) দেওয়া তালা শার্টারে মেরে চাবি তার ভাড়াটিয়া মাছ ব্যবসায়ি মাহাবুব বিশ্বাসের মাছ কমিশন এজেন্ট চোরাকারবারি নূর আমিনের কাছে দিয়ে দেন। গত ১৪ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে ওইসব জবরদখলকারিরা ওই গুদাম ঘরের সামনে লাগানো ‘এনসিসি ব্যাংক পারুলিয়া শাখায় দায়বদ্ধ’ সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে দিয়ে তার পাশে পলাশ এন্টারপ্রাইজের সাইন বোর্ড ও গুদামের মালিক আবুল হোসেন বলে টিনের উপর লিখে দেয়ালে সেটে দেয়। প্রতিবাদ করায় হত্যার হুমকির ঘটনায় তিনি ওইদিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপরও পুলিশের সহায়তায় আবুল হোসেন ও তার লোকজন ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে গুদাম ঘরের পাশের কিছু খালি জায়গা দখল করে টিনের চাল বানিয়ে তার(তপন) পূর্বের ভাড়াটিয়া নুর মোহাম্মদ আলীর ছেলে রুবেলকে দিয়ে চায়ের দোকান বসায়। বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেও কোন লাভ হয়নি। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিকেলে কালিগঞ্জ সার্কেলের তৎকালিন সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন ও দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। মাহাবুব বিশ্বাস ঘর ছেড়ে দেবন বললে এখনো তা করেননি। বাধ্য হয়ে তিনি গত ৫ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তার নির্দেশ পেয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ৮ মার্চ একইভাবে তিনি পুলিশ সুপারের কাছে যান। তার নির্দেশে গত ১৮ মার্চ দেবহাটা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলীর কাছে উভয়পক্ষ হাজির হলে তিনি অভিযোগ শুনানীর জন্য আগামি ৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। বহু অপকর্মের হোতা নূর আমিনের অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিরুদ্ধে গত ১১ মার্চ জেলা আইন শৃঙ্খলা মাসিক সভায় উপস্থাপিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়,যুবলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর, নব্য আওয়ামী লীগার এক সময়কার কুখ্যাত চোরাকারবারি নুর আমিন ও তাদের সহযোগিদের চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। এরই ফলশ্রতিতে সম্প্রতি যুবলীগ সভাপতি মিন্নুরের বিরুদ্ধে পারুলিয়া মাছ বাজারের নজরুলের জায়গা, নুর আমিনের সঙ্গে যৌথভাবে উত্তর পারুলিয়ার ফুটিবিবি, কমলা ও বেদানার জমি জবরদখল, রফিকুলের জায়গা জবরদখল, দক্ষিণ পারুলিয়ার ওয়াজেদ আলী ও তার শরিকদের জায়গা দখল, পুটিমারির বিনয় হালদারের কলেজ পড়–য়া মেয়ে অপহরনকারিকে মদত, অভিযোগ সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পায়। এসব ক্ষেত্রে নূর আমিন তার জামাতা সেনা কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়েছেন। একইসাথে নূর আমিনের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালে জেলেপাড়ার এক চালককে মারপিট করে সাইকেল হেলিকপ্টার ছিনতাই করে জেল খাটা, চরশ্রীপুর দিয়ে ভারতে বাঘের চামড়া পাচারের সময় বিডিআরে হাতে আটক, ভারত থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পশু ও পাখি পাচার, বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ায় উত্তর পারুলিয়ার অবঃ শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মধুসুধন দাসকে পেটাতে পেটাতে ভারতে পাঠানোর হুমকি, লেপ ব্যবসায়ি মঞ্জুরুল ইসলামের কাছ থেকে ১০ কাঠা জমি লিখে নিয়ে পাওনা পাঁচ লাখ টাকা চাওয়ায় দু’টি নাশকতার মামলা ও টেকনাফে একটি ভূয়া অপহরণ মামলায় ওয়ারেন্ট দেখিয়ে জেল খাটানো, বিএনপি নেতা সাবেক সাংসদ কাজী আলাউদ্দিন ও গোলাম ফারুক বাবুকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে বসে অর্থযোগানদাতা হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে দেশবিরোধী পরিকল্পনা, পুলিশের সহায়তায় নাশকতার মামলায় জেলে পাঠিয়ে রফিকুল মণ্ডলের জমি জবরদখল, ২০১৩- ২০১৪ সালে জামায়াত বিএনপির জেলা জুড়ে নাশকতার পরিকল্পনার অর্থযোগান দাতাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়। মাছ দিয়ে শাক ঢাকতে ক্ষুব্ধ মিন্নুর গত মঙ্গলবার দেবহাটায় সংবাদ সম্মেলন করে ও নুর আমিন সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে সুদের টাকা দিতে না পেরে বহু লোক ভারতে চলে গেছে, সড়ক ও জনপথের জায়গা দখলসহ বিভিন্ন কাল্পনিক ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য পত্রিকায় প্রকাশ করিয়েছেন। যা’ নিন্দা ও প্রতিবাদের ভাষা তার জানা নেই। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নু দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষন্ন করে নব্য আওয়ামী লীগার কুখ্যাত চোরাকারবারি নুর আমিনের হাত ধরে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে তার জায়গা দখলের চেষ্টা ও তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল রাখতে মিন্নুরের মত দূর্ণীতিবাজের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে উপস্থিপিত ষড়যন্ত্রের যথাযথ তদন্তের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ পুজা উদ্যাপন পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঘুজিৎ গুহ, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বিকাশ দাস, অনুপ কুমার বিশ্বাস।