ছয় বছরের শিশু সামিয়ার চোখে-মুখে আতঙ্ক। কখন না তার ছোট্ট পা-টি কেটে ফেলা হয়! ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকে পায়ের দিকে। আতঙ্কে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠে। মাকে জড়িয়ে ধরে চিত্কার করে জানতে চায়, ‘মা, ও মা, অরা আমার পা কাইট্টা ফালাইব!’
অবুঝ শিশুসন্তানের এমন কান্না সইতে পারছিলেন না মা সাহানারা বেগম। সামিয়ার পা ভালো করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় বছর আগে ২১ দিনে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারকচক্র। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। সন্তানের কান্না সইতে না পেরে শেষে ছুটে যান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। আকুতি জানান সন্তানের চিকিৎসার আর বিচার চান চিকিৎসার নামে প্রতারণা করা চক্রটির।
সাহানার আরজিতে সাড়া দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এক রোগীর অপারেশন করছিল ভুয়া ডাক্তার। র্যাবের অভিযান টের পেয়ে থিয়েটারে রোগী ফেলে পালানোর চেষ্টা করে কথিত ভুয়া ডাক্তার ও স্টাফরা। এ সময় রোগীর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল অপারেশন থিয়েটারের মেঝে। কিন্তু র্যাব সদস্যরা তাদের বেশ কজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, অভিযানের সময় নানা ধরনের অনিয়ম ও অপরাধের প্রমাণ পাওয়ায় ওই হাসপাতালটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, দুই ভুয়া ডাক্তার হাসান ও আনোয়ারকে দুই বছর করে কারাদণ্ড, ম্যানেজার সোহাগকে এক বছরের কারাদণ্ড, টেকনোলজিস্ট পঙ্কজ ও লিটন, দালাল ইউসুফ ও ইসমাইলকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হাসপাতালটি সিলগালা করে হাসপাতালে থাকা ২২ জন রোগীকে তাত্ক্ষণিক জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সাবেক পঙ্গু হাসপাতাল) স্থানান্তর করা হয়। সাহানার শিশুসন্তান সামিয়াকেও নেওয়া হয় পঙ্গু হাসপাতালে।
সাহানা জানান, দেড় বছর আগে সামিয়ার পায়ের সমস্যা নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন পঙ্গু হাসপাতালে। ওই সময় সেখানকার এক দালাল শারমিনের পাল্লায় পড়ে তিনি মেয়েকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ডা. আসিফের অধীনে ভর্তি করান। তখন প্যাকেজে মোট সাড়ে তিন লাখ টাকায় ২১ দিনে মেয়েটির পা ভালো করে দেওয়ার কথা বলেন ওই ডাক্তার। কথামতো টাকা পরিশোধ করা হলেও দেড় বছরেও সেই পা আর ভালো হয়নি, বরং বর্তমানে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। বর্তমানে প্রতারকচক্রটি আবার মেয়ের পা ভালো করে দেওয়ার প্রলোভনে তাঁর কাছে টাকা চাইছে। টাকা না দিলে সামিয়ার পা কেটে ফেলার ভয় দেখানো হয়েছে। ফলে শিশুটি বর্তমানে ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম আরো জানান, অভিযোগকারীরা পঙ্গু হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের কথা বললেও তাঁদের হাতেনাতে ধরতে পারেনি র্যাব। তবে পঙ্গু হাসপাতালের দুই ডাক্তার ওই হাসপাতালে আসেন বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। এ ছাড়া র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালের মালিক নুরুন্নবীকে ফোন করে অফিসে আসতে বললেও তিনি আসেননি। উল্টো তিনি পালিয়ে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।