অনলাইন ডেস্ক: একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। যে কোনো পরিস্থিতিতেই ভোটে যাওয়ার পক্ষে বড় একটি অংশ। তবে আরেকাংশ ‘নো খালেদা নো ইলেকশন’ এমন ধারায় বিশ্বাসী। এ অংশটি নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে শুধু খালেদা জিয়াই নয়, নির্বাচনের সময় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের নিশ্চয়তা চায়। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না হলে নির্বাচন বর্জনের পক্ষেই তারা। এ অংশের নেতারা জানান, এবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে ক্ষমতাসীন সরকার টিকবে না। সুতরাং বিএনপিকে ছাড়া সরকারও নির্বাচনে যাবে না। সে ক্ষেত্রে বিএনপির দাবি মানতে সরকারও বাধ্য। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকুক বা মুক্ত হোক, বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে। বিএনপিতে যারা বলছেন নো খালেদা নো ইলেকশন, তারা ভুল পথে আছেন। বড় দলের অহংকার ভুলে বিএনপিকে সব গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠন করতে হবে। বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাদের বুঝতে হবে, বেগম জিয়াকে জেলে রেখেই সরকার আরেকটি নির্বাচন করতে চায়। আর সেজন্যই তারা নতুন নতুন কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করছে।’ বিএনপির বড় অংশই মনে করে, যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যেতে হবে। নইলে বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। মোটামুটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেও ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া নির্বাচন বর্জনও কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। কোনো কারণে একাদশ নির্বাচন বর্জন করলে ক্ষমতাসীনরা আবারও বিনা বাধায় দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে। সে ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা কী হবে তাও বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিএনপির চরম দুর্দিন নেমে আসবে। সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে মুসলিম লীগের মতো দল হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিএনপির এ অংশ মনে করে, নির্বাচনের সময়ের সরকারকে একটি ‘ধাক্কা’ দিতে হবে। ওই সময়কার সরকারকে সমঝোতায় আনতে বাধ্য করা হবে। বিএনপিকে সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগোতে হবে। ওই সময় সারা দেশে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসন ইচ্ছা করলেও সারা দেশে কিছু করতে পারবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাও ভুল ছিল বলে মনে করে এ অংশটি। দলের আরেকাংশ বলছে, কোনোভাবেই খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না বিএনপির। তাহলে সরকারের পাতা ফাঁদেই পা দেওয়া হবে। এ অংশটি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষের নেতাদের সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলার অভিযোগও আনছেন। এ অংশের একাধিক নেতা জানান, বিএনপিতে সুবিধাবাধী নেতারাই খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। ওয়ান-ইলেভেনে সংস্কারপন্থি নেতাদের বড় অংশই খালেদাবিহীন নির্বাচনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। প্রয়োজনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনও বর্জনের পক্ষে এ অংশটি। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে সেখানে বিএনপির অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা আছে। একটি অংশ রয়েছেন, তারা বেগম জিয়াবিহীন নির্বাচনে যেতে রাজি নন। তবে আমার মনে হয়, বিএনপি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে ভালো করবে। অবশ্যই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপিকে সর্বাত্মক আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আবার যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে হবে। আর আমিও মনে করি, সেইভাবেই বিএনপি প্রস্তুত হচ্ছে।’
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষের নেতারা বলছেন, বিএনপিতে যারা কথায় কথায় নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিচ্ছেন, তারাই মূলত সরকারের এজেন্ট। তাদের পেছনেও সরকার আর্থিক ব্যয় করছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশগ্রহণ না করে, সে ব্যাপারে এই নেতাদের টোপ দেওয়া হয়। তারাই বেগম জিয়াকে বুঝিয়ে নির্বাচন বর্জনে বাধ্য করেন। এজন্য একটি মহলবিশেষ তাদের পুরসৃ্কতও করে। এ অংশটি প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করে বলেও অভিযোগ নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষের নেতাদের। এদিকে খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে দলটি। দল গোছানোর কার্যক্রমও বন্ধ। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির উদ্যোগও নেই। এরই মধ্যে দোরগোড়ায় পাঁচ সিটি নির্বাচন। সে বিষয়েও বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। খালেদা জিয়াবিহীন বিএনপি সামনে কোন পথে এগোবে, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। সূত্রমতে, খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ সংসদীয় আসনে নানাভাবে গণসংযোগ কর্মসূচিও চালাতে দেখা গেছে। নির্বাচনী আমেজে থাকা বিএনপিতে হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগও এখন থমকে গেছে। সবাই এখন ব্যস্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির কর্মসূচি বাস্তবায়নে। নির্বাচনের আগে বেগম জিয়ার মুক্তি মিলবে কি না তাও অনিশ্চিত। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।