ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে শনিবার ক্যামব্রিজের সড়কে শুভাকাঙ্ক্ষীদের ঢল নামে। প্রিয় বিজ্ঞানীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তারা জড়ো হন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্চের বাইরে। সেখানে হকিংয়ের কফিন পৌঁছানোর পর অভিবাদন জানাতে সবাই হাততালি দেন। চার্চে শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার আগে সাদা পদ্ম ও ‘পোলার স্টার’ খ্যাত সাদা গোলাপ ঢাকা কফিনটি নেওয়া হয় তার কর্মস্থল ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৭৬ বছর বয়সী বিজ্ঞানীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তার সন্তান রবার্ট, লুসি ও টিমথি। এছাড়া নাট্যকার অ্যালান বেনিট, ব্যবসায়ী এলোন মুস্ক ও মডেল লিলি কোলেও এতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া হকিংয়ের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘দ্য থিওরি অব এভরেথিং’ সিনেমায় প্রফেসর হকিংয়ের ভূমিকায় অভিনয়কারী এডি রেডমাইন অনুষ্ঠানে শোকবাক্য পাঠ করেন। তার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয়কারী ফেলেসিটি জোনস এতে যোগ দেন।
হকিংয়ের এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম থেকে নেওয়া কিছু উক্তি ও একটি কবিতা এবং মহাশূন্যে ধারণকৃত শব্দ অবলম্বনে বিশেষ তার জন্য একটি সংগীত রচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে সেটিকে থিম-মিউজিক হিসেবে বাজানো হয়। হকিংয়ের বন্ধু ও নভোচারী রয়্যাল মার্টিন রিস অনুষ্ঠানে প্লেটোর ‘অ্যাপোলজি ফোরটি’ বইয়ের ‘দ্য ডেথ অব সক্রেটিস’ পাঠ করেন। সেখানে মৃত্যুর পরও জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখার কথা বলা আছে।
এই মাসের শুরুত এক স্মৃতিচারণায় রিস বলেছিলেন, মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর জীবনের বেশিরভাগ সময়ই হুইল চেয়ারে আবদ্ধ থাকা হকিংয়ের সুউচ্চ বুদ্ধিমত্তা ও অধ্যাবসায় তাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মনে জায়গা করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কেন তিনি এমন ধ্রুব চিত্র হয়ে উঠলেন? কারণ মহাকাশ ঘুরে বেড়ানো একটি বন্দি মনের ধারণা মানুষের কল্পনাকে ধরতে পেরেছিল।’
বিজ্ঞানের অ্যাখ্যানে তার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার সবচেয়ে বিক্রিত বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের মহাকাশ ধারণার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সব বাধা অতিক্রম করার এমন অদ্বিতীয় উদাহরণ বিশ্বের আরও অনেক মানুষকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি ছিলেন ইচ্ছাশক্তি ও সংকল্পের চমৎকার প্রকাশ।
স্টিফেন হকিং কৃষ্ণ গহ্বর এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে তার কাজের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বিরল ধারার মোটর নিউরনের সঙ্গে লড়তে থাকা স্টিফেন হকিং হয়ে উঠেছিলেন তার কালের সবচেয়ে পরিচিত আর সম্মানিত বিজ্ঞানী। রসবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে হয়ে উঠেছিলেন বিজ্ঞানের জনপ্রিয় শুভেচ্ছাদূত। নিজের কাজের প্রতি সাধারণ মানুষ যেন সংলগ্নবোধ করতে পারেন তার প্রতি সবসময় নজর রেখেছেন তিনি। ১৯৮৮ সালে তার এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বই প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান।
১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্ম নেওয়া হকিং গত ১৪ মার্চ মারা যান। মৃত্যুর পর হকিংয়ের সন্তান লুসি, রবার্ট ও টিমের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের প্রিয় বাবা আজ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। একজন মহান বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি। ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। তার কাজ আর গ্রহণযোগ্যতা অটুট থাকবে বহু বছর। সাহস আর দৃঢ়তার পাশাপাশি তার মেধা আর রসবোধ বিশ্বজুড়ে মানুষকে প্রেরণা দিয়েছে।’
আগামী জুন মাসে হকিংয়ের দেহভস্ম ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে প্রোথিত করা হবে। সেখানে আইজ্যাক নিউটন ও চার্লস ডারউইনসহ বিভিন্ন মহান বিজ্ঞানীদের দেহভস্মও রয়েছে।