সাতক্ষীরা

ভারতীয় গরুশূন্য সাতক্ষীরা সীমান্তের খাটাল, কোরবানির ঈদে দেশীয় গরু খামার মালিকদের মুখে হাসি

By Daily Satkhira

August 27, 2016

এম. বেলাল হোসাইন: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সুভাষিনি গ্রামের রাজিয়া খাতুন। নিজের সংসারের কাজের ফাঁকে গরু ও ছাগল পালন করে থাকেন। প্রতি বছরের ন্যয় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দু’ মাস আগে গ্রামের হাট থেকে চারটি ছোট এড়ে বাছুর কিনেছিলেন। দাম পড়েছিল ৩৯ হাজার টাকা। পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মোটা তাজাকরণের কাজ করে যাচ্ছেন। ঈদের আগেই এ গরু এক লাখ ২০ হাজারের বেশি টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদি। রাজিয়া খাতুন বলেন, অন্যবারে ভারতীয় গরুতে হাট বাজার ছয়লাপ হয়ে যায়। এবার ভারতীয় গরু আসা পুরাপুরি বন্ধ। তাই গরু বিক্রি করতে সমস্যা হবে না। লাভও হবে আশানুরুপ। সাতক্ষীরা শহরের আনন্দপাড়ার আলিমা খাতুন। ঈদকে সামনে রেখে পুষেছেন তিনটি গরু। মোটা তাজাকরণের মাধ্যমে ঈদের আগে ওইসব গরু কেনার তিনগুণ দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদি। ভারতীয় গরু না আসায় বাজারে মাংসের দাম বেড়েছে। সেকারণে ফড়িয়াদের কাছে দেশী গরুর বিকল্প নেই। এ অবস্থা অব্যহত থাকলে তার মত অনেক নারীই গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি গবাদি পশু পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। ভারতীয় গরু না আসায় ঈদকে সামনে রেখে দেশী গরু মোটা তাজা করণ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা শহরতলীর কাশেমপুরের নাসরিন খাতুন, কালিগঞ্জের বসন্তপুরের সুফিয়া খাতুন, শ্যামনগরের রমজাননগরের ফতেমা বেগমসহ অনেকেই এবার কোরবানি ঈদে ভাল দামে গরু বিক্রি করার প্রত্যাশা নিয়ে যার পর নেই খুশিতে রয়েছেন। গত মঙ্গলবার এলাকার সবচেয়ে বড় গরুর হাট সাত মাইল হাটে এসেছিলেন চাঁদপুর জেলা সদরের রমজান আলী। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই কয়েকজন ব্যবসায়ি মিলে চার থেকে পাঁচ হাজার গরু নিয়ে জান সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী খাটালগুলো থেকে। এবার খাটাল গুলোতে ভারতীয় গরু না আসায় খাঁ- খাঁ করছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েও দেশীয় গরু কিনতে এ হাটে এসেছেন। একইভাবে কথা বলেন ফেনির দাগনভূঁইয়া উপজেলার মহেশ্বরপুর গ্রামের সবেদ আলী। তিনি জানালেন, হাটে এসেছিলাম গরু কিনতে। রাস্তায় পুলিশ, শ্রমিক ও চাঁদাবাজদের যেহারে টাকা দিতে হয় তাতে কোন প্রকারে কিছু গরু কিনেই ফিরবেন। একইভাবে কথা বলেন, ফেনী পৌরসভার তুহিন গাজী, লক্ষীপুরের সাহেব আলীসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ি। তারা জানান, সীমান্তের খাটাল ও হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর দেখা নেই। এরপরও খরচ করে এসেছেন। দাম বেশি পড়লেও কিছু গরু কিনে ফিরতে হবে। ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় জেলার বাজারগুলোতে গরুর মাংসের দাম বেড়ে ২২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানান তারা। সেক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল আযহায় দেশীয় গরু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ হলেও সার্বিকভাবে গো মাংসের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। গত বৃহষ্পতিবার দেবহাটার পারুলিয়া হাটে গরু কিনতে আসা সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের বাবুল আক্তার জানান, ভারতীয় গরুর দেখা নেই। চারজন মিলে একটি গরু কিনতে এসেছিলেন। দেশি গরুর দাম দ্বিগুণ। বাধ্য হয়ে প্রত্যেকে ছাগল কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইভাবে বাজেট ফেল হয়ে যাওয়ায় বড় গরুর পরিবর্তে ছোট গরু কিনেই খুশি থাকতে হবে বলে জানালেন আবাদেরহাটে গরু কিনতে কলারোয়ার সরসকাটির মোশাররফ হোসেন, উফাপুরের  ফারুক হোসেন, সদর উপজেলা যোগরাজপুরের সাবান আলী, দেবনগরের আদর আলীসহ কয়েকজন। সীমান্ত গ্রামবাসি জানায়, সাতক্ষীরার বৈকারী, কুশখালী, তলুইগাছা, কাকডাঙ্গা, ঘোনা, গাজীপুর, ভোমরা, মাদরা, হিজলদী, চান্দুড়িয়া, সোনাবাড়িয়া, কোমরপুর, ভাতশালা, কালিগঞ্জের খাঞ্জিয়া, দাদপুর, বসন্তপুর, শ্যামনগরের কৈথালি, রমজাননগরসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন ভারতীয় সিন্ধিয়া, ফ্রিজিয়ান, জার্সি, হরিয়ানা, নেপালি, সম্বলপুরিসহ বিভিন্ন জাতের গরু প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার করে বাংলাদেশে আসতো। ভারতীয় ব্যবসায়িরা এখানকার ব্যবসায়িদের সঙ্গে চুক্তি করেই তাদের গরু ঠেলে এ দেশে পাঠাতো।  এসব গরু বিজিবির সাতক্ষীরা ৩৮ ব্যাটালিয়নের অধীনে থাকা ১৩টি ও নীলডুমুর ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধীনে থাকা ৪টি খাটালে রেখে চারটি শুল্ক করিডোরের মাধ্যমে ৫০০ টাকা হারে রাজস্ব নিয়ে বৈধতা পেতো।  কিন্তু ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিজিবির অনীহার কারণে  বর্তমানে ভারতীয় গরু আসছে না বললেই চলে। ফলে সীমান্তের ১৭টি খাটাল এখন খাঁ- খাঁ করছে। তবে তারা দাবি করেন, ভাতশালা, তলুইগাছা ও সোনাবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে খুবই অল্প সংখ্যক ভারতীয় গরু অনিয়মিতভাবে আসছে। পারুলিয়া গরুর হাটের ইজারাদার আবু তালেব মোল্ল্যা জানান, ভারতীয় গরু না আসায় জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়িরা অনেকেই এখনো পর্যন্ত কোরবানির পশু কিনতে এ হাটে আসেনি। ফলে অন্যবারের তুলানায় তাদের ইজারার টাকা কম উঠবে। সাতক্ষীরা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট এর সহকারি শুল্ক কর্মকর্তা সানাউল কবীর জানান , জেলার চারটি করিডোরের মাধ্যমে ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরে সাত লাখ ৫০ হাজার ৯৯৪টি গরু এসছে। এ থেকে ৩৭ কোটি ৫৩ লাখ ৩৫ হাজার ১০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়।  ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে ৭৬ হাজার ৬৭০টি গরু থেকে তিন কোটি ৬১লাখ ২০ হাজার ৪৩০ টাকা আদায় হয়। চলতি অর্থ বছরে গত জুলাই মাসে মাত্র তিন হাজার ৮২০টি গরু  এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে গত অর্থ-বছরের তুলনায় চলতি অর্থ-বছরে গরু আসার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে। এ ব্যাপারে বিজিবির সাতক্ষীরা ৩৮ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর লোকমান হামিদ বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতীয় গরু আনতে না যাওয়ার জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে রাখালদের কঠোর নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য ভারতীয় গরু আসার সংখ্যা ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাস জানান, ভারত থেকে গরু  কম আসায় স্থানীয় খামারীরা লাভবান হবেন। এছাড়া সাতক্ষীরায় পারিবারিকভাবে খামারীরা যে পরিমান গরু পালন করছেন তাতে ঈদে গরুর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে দাবি করেন তিনি।