সংসদীয় আসনের সীমানার পরিবর্তন চান না অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিরা। তারা আগের সীমানা বহাল রাখতে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে। এ জনপ্রতিনিধিরা ছাড়াও সংসদীয় সীমানা পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে ৬০টি আসনে ৬২১টি আবেদন জমা পড়েছে।
চলতি মাসে এ আবেদনগুলোর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষে সংসদীয় আসনের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করে ইসি। খসড়ায় ৩৮ আসনে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এসব পরিবর্তনে আপত্তি জানিয়ে ইসিতে আবেদন করে ক্ষমতাশীন দলের মন্ত্রী ও এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ১৬টি জেলার ৬০টি আসন থেকে ৬২১টি আবেদন আসে। এর মধ্যে বর্তমান সীমানায় অপত্তি জানিয়ে আবেদন পড়েছে ৪০৪টি আর সীমনা পরিবর্তন চেয়ে আবেদন এসেছে ২১৭টি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগের সীমানা বহাল রাখতে আবেদন করেছেন ৪ জন মন্ত্রী ও ১৫ জন এমপি । অপরদিকে সীমানা পরিবর্তন চেয়েছেন ৩ জন মন্ত্রী ও ৭ জন মন্ত্রী। এসব মন্ত্রী-এমপিরা আবেদনের পাশাপাশি কমিশনারদের সঙ্গে দেখা করছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া তালিকা দাবি-আপত্তি শুনানির জন্য বিভাগ অনুযায়ী নথি উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। আগামী সপ্তাহের শুনানি হতে পারে। তবে আবেদন দেখে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে কিভাবে এবং কবে থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণে এসব দাবি-আপত্তির শুনানি শুরু করা হবে।
ইসি সূত্র জানায়, সংসদীয় আসনে পরিবর্তন চেয়ে আবেদন এসেছে ৬০টি আসন থেকে, এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯টি আসনে , রংপুর বিভাগে ৪টি, রাজশাহী ৫টি, খুলনা ৮টি, বরিশালে ৪টি, সিলেট ৪টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫টি আসন থেকে আবেদন এসেছে ।
ইসির প্রস্তাবিত খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মাগুরা-২ আসনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মহম্মদপুর ও শালিখ উপজেলার পাশাপাশি সদর উপজলোর শত্রুজিৎপুর, গোপালগ্রাম, কুচিয়ামোড়া ও বেরইল পলিতা ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনটি বিদ্যমান। কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়ায় সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নকে মাগুরা-১ আসনে সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যোগাযোগের সুবিধার্থে এই আসনে পরিবর্তন না করার লিখিত দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নগুলোর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। পাশাপাশি মাগুরা-২ আসনের বর্তমান সাংসদ ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শ্রী বীরেন শিকদার ও মাগুরা-১ আসনের সাংসদ এটিএম আবদুল ওয়াহাব। এই আসনে কোনো পক্ষই পরিবর্তন চায় না।
প্রস্তাবিত খসড়ায়, ঢাকা-২ নির্বাচনি এলাকা তিনটি আসনে ভাগ হয়ে গেছে। বিদ্যমান সীমনায় এই আসনটি ঢাকা সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড (৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড), কেরানীগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন (হজরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রুহিতপুর, বাস্তা ও কালিন্দী), সাভার উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন (আমিন বাজার, তেতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা) নিয়ে গঠিত। কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়া সীমানায় পুরো কেরানীগঞ্জ উপজেলাটি এখন ঢাকা-২ আসনের মধ্যে পড়েছে। (আগে কেরানীগঞ্জ উপজেলার আগানগর, জিনজিরা, তেঘরিয়া, কোন্ডা ও শুভাঢ্যা ছিলো ঢাকা-৩ আসনে)।তাই ঢাকা-২ আসন বিন্যাসের ওপর আপত্তি জানিয়ে কমিশনে আপিল করেছেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি আশা করছেন, তার নির্বাচনি এলাকা অপরিবর্তিত থাকবে।
কুমিল্লা-৬ আসনের পরিবর্তন না করার আবেদন জানিয়েছে সেখানকার বর্তমান সাংসদ আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার। তিনি সামীনা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার পূর্বক ২০১৩ সালের বিদ্যমান সীমানা বহাল রাখার আবেদন করেন।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ. কে ফজলুল হক সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদীয় আসনের পরিবর্তন চেয়েছেন। তিনি আবেদনে বলেন, সাতক্ষীরা-৪ নির্বচনী এলাকা শ্যমনগর উপজেলার ১২টি এবং কালিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে ২০০৮ সালে যে সীমানা ছিল সেটি বহাল রাখতে। ইসির খসড়ায় এ আসনটি ভাঙ্গার প্রস্তাব করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার জালাল আহম নামে এক ব্যবসায়ী চট্ট্রগ্রাম-১৪ আসনের সীমানায় পরিবর্তন চেয়ে আবেদনে বলেন, চট্টগ্রাম সাতকানিয়া উপজেলাধীন হুদাহা ইউনিয়নকে অন্তভূক্ত করতে হবে। ২০০৮ সালে এ আসনে ইউনিয়নটি অন্তভুক্ত ছিল। সে অনুযায়ী সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।
এদিকে কুড়িগ্রাম ৩ ও ৪ আসন যেভাবে বিন্যাস করা হয়েছে তা শুনানিতে বহাল রাখায় কমিশনকে শক্ত ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানিয়ে গেছেন জাতীয় পার্টির একজন জনপ্রতিনিধি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর তার প্রত্যাশা অনুযায়ী আসনটি বিন্যাস করেছে কমিশন। তিনি নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে তার অবস্থান পরিষ্কার করে যান।
গত ১৪ মার্চ ১৬টি জেলার ৩৮টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে ইসি। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যার চেয়ে প্রশাসনিক অখন্ডতা রক্ষার ওপর বেশি জোর দেয় ইসি। ফলে সংসদীয় আসনগুলোতে জনসংখ্যার ব্যবধান বাড়ছে।
ইসি প্রকাশিত গেজেটে দেখা যায়, এবার ছয়টি পদ্ধতি অনুসরণ করে সীমানা বিন্যাস হয়েছে। সেগুলো হলো ২০১৩ সালে নির্ধারিত জেলার আসন সংখ্যা ঠিক রাখা, প্রশাসনিক ইউনিট, বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের অখণ্ডতা যথাসম্ভব বজায় রাখা, ইউনিয়ন বা পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক আসনে বিভাজন না করা, যেসব নতুন প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে, তা অন্তর্ভুক্ত করা, বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনায় রাখা। এর ফলে প্রায় অর্ধশত আসনে জনসংখ্যার ভারসাম্য দেখা যাচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আগামী ৩০ এপ্রিল সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট আকারে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।