তালা

তালায় হায় হায় কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হাফিজুর আটক

By Daily Satkhira

April 05, 2018

মীর জাকির হোসেন, তালা: কথিত হাই হাই এমএলএম কোম্পানী ওয়ার্ল্ড মিশন ২১ লি. এর প্রতারনার জ্বালে ধরা পড়েছে তালা সহ আশপাশের এলাকার শত শত বেকার যুবক। যুবকদের মধ্যে বেকার প্রায় সকলেই ছাত্র ও ছাত্রী। বেকারত্ব দূরীকরন, অধিক মুনাফা অর্জন করে স্বল্পদিনে কোটিপতী, সামাজিক সম্মান সহ গাড়ী, বাড়ির মালিক বানিয়ে দেবার প্রলোভন দেখিয়ে এই সকল ছাত্র ও বেকার যুবকদের এই হাই হাই এমএলএম কোম্পানী ওয়ার্ল্ড মিশন ২১ লি. এর কথিত ডিস্ট্রিবিউটর বানানো হয়। ডিস্ট্রিবিউটর হবার পর দীর্ঘ দিনেও কোনও বেকার যুবক কিংবা ছাত্র ও ছাত্রীরা একটি টাকাও কোম্পানী থেকে পায়নি। এমনকি ডিস্ট্রিবিউটর হবার জন্য জমা দেয়া আড়াই হাজার টাকাও তারা ফেরৎ পায়নি। এনিয়ে ক্ষুব্ধ ছাত্র/ছাত্রীরা বুধবার বিকালে তালার নামকাওয়াস্তের অফিস ঘেরাও করে কথিত মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ অফিসার হাফিজুর রহমানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। প্রতারক হাফিজুর রহমান নড়াইল জেলার কালিয়া সদরের মো. নজরুল খান এর ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, হাই হাই এমএলএম কোম্পানী ওয়ার্ল্ড মিশন ২১ লি. বিগত মাসে দেড়েক আগে তালা থানার সামনে একটি জরাজীর্ন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি রুম ভাড়া নেয়। সেখানে ডেকোরেটর থেকে কয়েকটি ভাড়া করা চেয়ার ও একটি টেবিল রেখে পেতে বসে প্রতারনার ফাঁদ। আর এই ফাঁদে প্রথমেই পা দিয়ে বসে ছাত্র ও ছাত্রীরা। এছাড়া একাধিক বেকার যুবককেও টার্গেট করে এই ফাঁদে ফেলানো হয়। এক পর্যায়ে তালা উপজেলার ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩ শত বেকার যুবক এবং ছাত্র ও ছাত্রীদের এই হাই হাই কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর বানিয়ে তাদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষন দেয়ার নামে মস্তিস্ক বিগড়ে দেয়া হয়। প্রশিক্ষনের সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে দফায় দফায় ৫ থেকে ৭শত টাকা করে আদায়ও করা হয়। এসময় কথিত প্রত্যেক ডিস্ট্রিবিউটর’র বেকারত্ব দূরীকরন, অধিক মুনাফা অর্জন করে স্বল্পদিনে কোটিপতী, সামাজিক সম্মান বৃদ্ধি সহ গাড়ী-বাড়ির মালিক বানিয়ে দেবার প্রলোভন দেখানো হয়। প্রতারনার এই ফাঁদে পড়ে বেকার যুবরা সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। কয়েকদিন ধরে তাদের পরিশ্রমের কোনও ফলতো পায়নি এমনকি প্রথমে জমা দেয়া ২ হাজার ৫ শত টাকা ফেরত বা সমমূল্যের কোনও পন্য তারা ক্রয় করতে পারেনি। এনিয়ে প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিরা গত কয়েকদিন ধরে তালার কথিত অফিসে এসে টাকা ফেরতের দাবী জানাচ্ছিল। কিন্তু টাকা ফেরত দেবার মতো কোনও ব্যক্তি এখানে ছিলনা। ভাড়া করা চেয়ার ও টেবিল ছাড়া কথিত অফিসের নিজস্ব কোনও সম্পদ এখানে নেই, নেই অফিসের কোনও সাইন বোর্ড। যে কারনে বুধবার বিকালে প্রতারিত হওয়া শতাধিক ছেলে ও মেয়ে অফিসে আসা কথিত মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হাফিজুর রহমানকে ঘেরাও করে। দীর্ঘ ১ ঘন্টা অফিসের মধ্যে আটক রাখার সংবাদ পেয়ে তালা থানা পুলিশ হাফিজুরকে আটক করেন। এব্যপারে তালা থানাও ওসি মো. হাসান হাফিজুর রহমান জানান, হাফিজুর রহমানকে থানায় আনা হলেও তার বিরুদ্ধে প্রতারনার শিকার হওয়া কেহ এখনও প্রত্যক্ষ অভিযোগ করেনি। তবে এবিষয়ে পরবর্তী করনীয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে। প্রতারিত হওয়া কলেজ ছাত্র রাকেশ, শবুজ, তপু ও আমিনুর জানান, কোম্পানীর প্রশিক্ষন দিয়ে আমাদের মুহুর্তের মধ্যে কোটিপতী বানিয়ে দেওয়া হয়! আমরা বুঝতে না পেরে যে যেভাবে পেরেছি টাকা যোগাড় করে কোম্পানীর লোকদের হাতে দিয়েছি। এদের মধ্যে কেউ ৩ টি কেউ ৫টি করে ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে মোটা অংকের টাকা জমা দিয়েছে। তাছাড়া কোম্পানি থেকে ধনী হবার জন্য কথিত প্রশিক্ষন নিয়ে আরো ৫/৭শত টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু এখন জেনেছি এর সব ভুয়া এবং আমরা ৩ শত ছেলে-মেয়ে প্রতারনার পাঁদে পড়েছি। এই সকল বেকার ছাত্ররা এই হাই হাই এমএলএম কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবী জানিয়েছে। এদিকে, উক্ত হাই হাই কোম্পানী থেকে দেয়া একটি প্রশিক্ষন শীটে দেখা গেছে কিভাবে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে এই কোম্পানীতে আনতে হবে। এছাড়া আছে কি ভাবে টাকা যোগাড় করে কোম্পানীর কাছে জমা দিতে হবে এবং পত্রিকায় কোম্পানীর বিরুদ্ধে নেগেটিভ সংবাদ ছাপা হলে তা কিভাবে সামাল দিতে হবে- সহ বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা।