খেলা

শিরোপা আবাহনীরই

By Daily Satkhira

April 06, 2018

লং অন থেকে ওয়াইডিশ মিড উইকেটে দৌড়ে গিয়ে বদলি ফিল্ডার সাইফ হাসানের নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচে গেলেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের আশার সলতে জ্বালিয়ে রাখা মুশফিকুর রহিম। আর সঙ্গে সঙ্গেই আগাম শিরোপা উদ্‌যাপন শুরু হয়ে গেল বাদ্য-বাজনা নিয়ে অপেক্ষায় থাকা আবাহনী সমর্থকদেরও। একটু পরে দেখা গেল ঢাকা থেকে প্রিমিয়ার লিগের ট্রফিও গিয়ে পৌঁছেছে বিকেএসপির মাঠে। ততক্ষণে মিরপুরে খেলাঘরের কাছে শেখ জামাল ধানমণ্ডির হারে যদিও তাদের শিরোপা উৎসব ভণ্ডুল হওয়ার সুযোগ ছিল না। তবু জিতে উদ্‌যাপনের মহিমাই আলাদা। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকের বিদায়ের পর আর কেউ তাদের জয় অনিশ্চিত করেও তুলতে পারেনি। ৯৪ রানের জয়ে তাই ১৯তম লিগ শিরোপার বল্গাহীন উৎসব করতে করতেই ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পেরেছে আবাহনী। যে শিরোপা জয়ে আছে অনেক প্রশ্নও। শেষ ম্যাচে বড় জয় নিয়ে হয়তো কথা বলার কিছু নেই, কিন্তু এ পর্যন্ত আসতে আবাহনী খেলেছে অনেকগুলো সন্দেহজনক ম্যাচ। আর তাই এই শিরোপা জয় আবাহনীকে কতটা গর্বিত করল, তা নিয়ে সন্দিহান দেশের ক্রিকেট মহল।

এই মাঠে খেলা নিজেদের সবশেষ ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ ৩৯৩ রানের রেকর্ড গড়েছিল আবাহনী। কাল করল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭৪ রান। দোলেশ্বরের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে ২৩৬ রানের নতুন রেকর্ড গড়ার পথে সেঞ্চুরি করেছিলেন দুই ওপেনারই—এনামুল হক (বিজয়) ও নাজমুল হোসেন (শান্ত)। এদিন একই রকম হলো না কিন্তু মাত্র ১২ ওভারেই ৯২ রানের জুটিতে শুরুর ছন্দটা ধরা হয়ে যায় আবাহনীর। ৫১ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় খেলে যাওয়া ৫৭ রানের যে ছন্দ ধরে দেওয়া ইনিংসের জন্য তাই দিনের শেষে মাশরাফি বিন মর্তুজার অকুণ্ঠ প্রশংসাও পেলেন এনামুল, ‘সবাই হয়তো দুটি সেঞ্চুরির কথাই বলবে, কিন্তু আমার কাছে এনামুলের ইনিংসটিও কম মূল্যবান নয়।’ নাজমুলের মতো সেঞ্চুরি দেখা দিয়েছে আবাহনী অধিনায়ক নাসির হোসেনের ব্যাটেও। তবে নাজমুলের এই মাঠে টানা দ্বিতীয় এবং লিগে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরিটা যদি হয়ে থাকে নিশ্ছিদ্র, তাহলে এই আসরে নাসিরের প্রথম সেঞ্চুরি বহুবার জীবন ফিরে পাওয়ার গল্পে লেখা। ২৭ রানে মিড উইকেটে তাঁর লোপ্পা ক্যাচ ফেলেছেন আশিকুজ্জামান। কঠিন হলেও নাসিরের রিটার্ন ক্যাচ নেওয়া অসম্ভব ছিল না রূপগঞ্জ অধিনায়ক নাঈম ইসলামের জন্যও। ফিফটির পর নাসিরের নিশ্চিত ক্যাচকে ছক্কা বানিয়েছেন মোশাররফ হোসেনও। প্রতিপক্ষের জঘন্য ক্যাচিং আর বাজে ফিল্ডিংয়ে নাসিরও পেয়ে যান পাল্টা আক্রমণে ছিন্নভিন্ন করার পথ। তা করেনও। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে ৭৯ বলে নাজমুলের আগেই পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে। একই ওভারে (৪২) নাজমুল তিন অঙ্কে যান ৯৭ বলে। দুজনের ১৮৭ রানের চতুর্থ উইকেট পার্টনারশিপে অবশ্য নাসিরের একারই ৯১ বলে ১২৯ রান। তুলনায় রয়েসয়ে খেলা নাজমুলের ইনিংসটি ১০৭ বলে ১১৩ রানের। এই আসরে চার সেঞ্চুরিতে লিগ সর্বোচ্চ ৭৪৪ রান করা নাজমুলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎও এখান থেকেই দেখলেন মাশরাফি, ‘এই ছেলেটা লম্বা রেসের ঘোড়া হবে।’দলের ইনিংস লম্বা করায় ব্যাট দাগলেন মাশরাফি নিজেও। ৮ বলে ৪ ছক্কায় অপরাজিত ২৮ রান। এর মধ্যে তিনটিই মেরেছেন শেষ ওভারে তরুণ পেসার আশিককে। তাতে ৩৭৪ করেও নির্ভার হওয়ার উপায় ছিল না, কারণ দোলেশ্বর প্রায় ৪০০ তাড়া করেও বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় বৃষ্টি আইনে এগিয়ে ছিল ১ রানে। তাই স্কোরবোর্ডে কোনো রান জমা হওয়ার আগেই রূপগঞ্জ ওপেনার আব্দুল মজিদ কিংবা ৪১ রানে অভিষেক মিত্রকে অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরানোর পরও ঢিলেঢালা হওয়ার সুযোগ ছিল না আবাহনীর। তা যে ছিল না, সেটি মোহাম্মদ নাঈম শেখকে (৫৪ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৭০ রান) নিয়ে মুশফিকের (৬৬ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৬৭ রান) ৯১ রানের পার্টনারশিপই বোঝাচ্ছিল। অফস্পিনে দুজনকেই তুলে নেওয়া নাসিরকে তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কার দেওয়া ছাড়া উপায়ও ছিল না। মুশফিকের বিদায়ের পর লড়াইয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া রূপগঞ্জ অধিনায়ক নাঈমও (৬৮ বলে ৭৬) যথাসাধ্য দলকে লড়াইয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে দল যে ৩৭৪ তাড়ার শক্তি হারিয়েছে মুশফিক যাওয়ার পরপরই। এরপর ছিল উৎসবের অপেক্ষা। আবাহনী সমর্থকরা যখন সেটি করছেন, তখন মাশরাফি এসে সংবাদমাধ্যমকে বলে গেলেন, ‘আমার যখন অভিষেক হয়, তখন ঢাকার লিগ দারুণ জমজমাট ছিল। এবারও দারুণ জমজমাট হলো আসরটি। কাগজ-কলমে আমরা সেরা দল হয়েও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো।