জাতীয়

‘জঙ্গিদের ওপর দায় পড়বে, ভেবেই রথিশকে হত্যা’

By Daily Satkhira

April 06, 2018

জেএমবি’র হামলায় নিহত জাপানি নাগরিক ওসি কুনিও ও মাজার খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন রথিশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা। তাকে খুন করলে সবাই ভাববে জঙ্গিরাই তাকে মেরে ফেলেছে। এই ভাবনা থেকেই তাকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী দীপা ভৌমিক।

বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) রাতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন তিনি। এদিন রাত দেড়টা পর্যন্ত রংপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার খাস কামড়ায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক অবিশ্বাস, পারিবারিক অশান্তি, অবজ্ঞা, একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক থাকাসহ নানা কারণে স্বামী রথিশকে হত্যা করেছেন বলে ১২ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন দীপা ভৌমিক।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেছনের গেট দিয়ে দীপা ভৌমিক, কামরুল ইসলাম এবং দুই সহযোগী রোকন ও সবুজকে আদালতে নেওয়া হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল হোসেন রাত পৌনে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, কামরুল ইসলাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে না চাওয়ায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপর তিন জন আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তাদের আদালতে রাখা হয়।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, দীপা জবানবন্দিতে জানান, ২৫ বছরের বিবাহিত জীবনে তাদের দাম্পত্য জীবন কখনওই সুখের হয়নি। তার স্বামী পরকীয়ার সম্পর্ক থাকায় তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এর মধ্যে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তিনি আরও জানান, প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যাওয়ায় স্বামীর সঙ্গে তার কয়েক দফা ঝগড়া হয়। তখনই সিদ্ধান্ত নেন কামরুলকে তিনি বিয়ে করবেন। কিন্তু পথের কাঁটা হিসেবে স্বামী রথিশকে সরাতে হবে ভেবে দুই জন মিলে দুই মাস আগে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।হত্যার পর কীভাবে লাশ গুম করা হবে সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। রথিশ জেএমবির হাতে নিহত ওসি কুনিও ও মাজার খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। ওই দুই মামলায় জঙ্গিদের যেহেতু ফাঁসির আদেশ হয় তাই পরিকল্পনা ছিল রথিশকে হত্যা করে বিষয়টি জঙ্গিরা করেছে বলে প্রচার করার।এটা ভেবেই তাকে হত্যা করা হয়।

দীপা ভৌমিক জানান, ২৯ মার্চ রাতে রথিশ বাসায় আসলে তাকে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাইয়ে দেই। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অচেতন হয়। পরে আগে থেকে বাসার পেছনে থাকা রথিশকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর তার পরনে থাকা লুঙ্গি ও গেঞ্জির বদলে প্যান্ট ও শার্ট পরানোর পর আলমারির ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা হয়। সকালে কামরুল বাসা থেকে বেরিয়ে একটি রিকশাভ্যান ভাড়া করে এনে আলমারিটি তুলে নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ায় অবস্থিত কামরুলের নির্মাণাধীন বাসায় নিয়ে গিয়ে গর্তে ফেলে দিয়ে বালুচাপা দেওয়া হয়।

৩০ মার্চ তিনি সবাইকে জানান,সকালে তার স্বামী কাজের কথা বলে বাইরে গেছে দুপুর পর্যন্ত ফেরেনি। তার (রথিশ) মোবাইল ফোনও বন্ধ, যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে সবাইকে জানানো হয়।