মোঃ আরাফাত আলী: কালিগঞ্জের দুদলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নির্যাতন করে অজ্ঞানের ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে ২য় বার তদন্ত অনুষ্ঠিত সম্পন্ন হয়েছে।রোববার সকাল সাড়ে ১০ টায় দুদলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ম্যানেজিং কমিটি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিরাজুল আশরেকীন, সোহরাব হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে তদন্ত সম্পন্ন করেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মথুরেশপুর ইউনিয়নের দুদলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিএম আশরাফ উদ্দীন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাগরকে (৭) গত ২৭ মার্চ বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য করেন। কিছুক্ষণ পর ওই শিশু শিক্ষার্থী অজ্ঞান হলে তাকে প্রথমে স্থানীয় দু’জন চিকিৎসক এবং পরবর্তীতে কালিগঞ্জে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারি কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্যাতনে শিক্ষার্থী অজ্ঞান হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় অভিভাবক ও সচেতন মহলের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিনের নির্দেশে ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওমর ফারুক গত ০৩/০৪/১৮ তারিখে তদন্ত সম্পন্ন করেন। কিন্তু ধুরন্ধর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিএম আশরাফ উদ্দীন ঘটনাটির দায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত আশরাফ হোসেনের উপর চাপানোর পাশাপাশি ঘৃণ্য কৌশল অবলম্বন করে পূণরায় তদন্তের আবেদন জানান। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় রোববার আবারও তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঝর্ণা আক্তার, অভিভাবক সদস্য যথাক্রমে সৈয়দ ইব্রাহিম আলী, মীর মন্তাজ আলী, জিএম আব্দুল জলিল, মোছা. মোহিনী খাতুন, মোছা. রঞ্জিলা খাতুন, ইছমত আলী ইতি, স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ হেমায়েত আলী বাবু, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য আলহাজ্জ্ব সৈয়দ শোকর আলী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি কাজী নূর আম্বিয়া, অভিভাবক সাবুর আলী, কাজী রাইসুল আলম, নির্যাতিত শিক্ষার্থী সাগর ও তার অভিভাবক জাকির হোসেনসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিএম আশরাফ উদ্দীনের আচার আচরণ খুবই রূঢ়। তিনি কুটকৌশল করে ওই বিদ্যালয়ে ভাল কোন শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখন ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করার পাশাপাশি কিছু সাংবাদিককে দিয়ে দু’একটি পত্রিকায় নিজের পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করিয়ে নিয়েছেন। তিনি নির্যাতিত শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন অভিযোগ করে তারা বলেন, সত্য কখনও চাপা থাকে না। তিনি এতই নিষ্ঠুর যে নির্যাতনে অজ্ঞান হওয়ার পরও তার চিকিৎসায় সহায়তা করেন নি এবং খোঁজখবর নেননি। শিশু নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে অবিলম্বে দুদলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দ্রুত অপসারণ ও বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের দাবি জানান এসব অভিভাবক ও এলাকাবাসী। তদন্তকালে এসএমসি’র সভাপতি ঝর্ণা আক্তারসহ কয়েকজন সদস্য ও এলাকাবাসী লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। এদিকে শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতনকারী প্রধান শিক্ষক জিএম আশরাফ উদ্দীন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাগরকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর কিছু সাংবাদিক পক্ষে ভাল নিউজ করে দেয়ার কথা বলে তাকে দেখা করতে বলেছিল, কিন্তু করেননি বলে জানান।