সাতক্ষীরা

লাবসা ইউপিতে অর্ধকোটি টাকার দুর্নীতি ॥ দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা

By daily satkhira

April 09, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ উত্তোলন করে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাথের অভিযোগ রয়েছে বিএনপির নেতা চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসেন চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম। আত্মসাথকৃত টাকা জায়েজ করতে মরিয়া তিনি। ইতোমধ্যে নিম্নমানের ইট বালু দিয়ে তড়িঘড়ি করে বিনেরপোতা হাট বাজার ঢালাই সম্পন্ন করেছেন। যদিও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং স্থানীয়রা যেনতেন ভাবে হাটবাজার ঢালাইয়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু কৌশলী চেয়ারম্যান আলিম উর্দ্ধতন মহলকে ম্যানেজ করে রাতারাতি গোপনে ঢালাই সম্পন্ন করেছেন। এ কাজ সম্পন্ন করে তিনি হাটবাজারের জন্য বরাদ্ধ হওয়ায় ১২ লক্ষ ১৫ হাজার ৮৮৮ টাকা জায়েজ করার চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে। ১২লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও সেখানে কাজ করা হয়েছে সর্বউচ্চ ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার। কিছু দিন যেতে না যেতেই হাট বাজার আবারো পূর্বের অবস্থা ফিরে যাবে বলে মনে করেন বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এদিকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪৬% হিসাবে ৩৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৭২৩ টাকা ১৩ জুন ২৩২৪০৭৪ নং চেকে উত্তোলন করেন ইউপি চেয়াম্যান আব্দুল আলিম ও ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাক। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে উক্ত টাকার কোন প্রকল্পই বাস্তবে রূপ পায়নি। বিভিন্ন ভূয়া প্রকল্প, একই কাজ বার বার দেখিয়ে এবং ভুয়া রেজুলেশন করে পুরো টাকাটাই ইউপি চেয়ারম্যান ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাকের সহযোগিতায় পকেটস্থ করেছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানাগেছে। তবে অভিযোগ উঠার পর চেয়ারম্যান ইউনিয়নের খেলারডাঙ্গী, রাজনগর ও খেজুরডাঙ্গী এলাকার রাস্তা সংস্কারে উক্ত টাকা খরচ করেছেন বলে দাবি করেন। অথচ তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে উক্ত রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হয়েছে এলজিএসপি-২ এর অর্থ দিয়ে। এছাড়া ওই আত্মসাথ কৃত অর্থ জায়েজ করতে উক্ত রাস্তাগুলোতে ঘষামাজার কাজ করার আয়োজন করছেন বলে এলাকাবাসীর দাবি। ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, আলিম চেয়ারম্যান এতটায় হীন মানসিকার মানুষ যে তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের জমি জবর দখল করে নিতেও দিধাবোধ করেন নি। তিনি শুধু নিতে জানেন কাউকে দেওয়ার মতো মানুষিকতা তার নেই। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ভিটেছাড়া করতেও তিনি এতটুকু কার্পন্য করেন না। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত তারই ইউনিয়নের সংখ্যালঘু নিতাই মুহুরীকে স্ব পরিবারে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ভূমিহীন নেতা সাইফুল্লাহ লস্কর নেতাই মহুরির পক্ষ নিয়ে কথা বলায় তাকেও নির্মমখাকে জীবন দিতে হয়েছে ওই চেয়ারম্যান আলীমসহ তার সহযোগীদের হাতে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের রুমে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ছবি থাকায় চেয়ারম্যান সেই রুমে বসে কোনো দিন মিটিং করেন না। তাছাড়া অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি ভিন্ন ভিন্ন নামে অবৈধভাবে দখল নিয়ে ভোগ করছেন। ইউনিয়নের গাঁ ঘেষা বেতনা নদীর চারের মাটি বিক্রি করেও লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাথ করছেন তিনি। এতে করে বর্ষা মৌসুমে নদীর ভেড়ীবাধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৃষ্টি হতে পারে স্থায়ী জলাবদ্ধতাও। উল্লেখ্য : লাবসা ইউনিয়নের আওতাধীন বিনেরপোতা হাট ইজারা হতে ৪৬ % পান ইউনিয়ন পরিষদ। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে প্রতিবছর একটি বড় অংকের অর্থ জমা হয়। তবে চলতি বাংলা ১৪২৪ সালে বিগত দিনের সকল রেকর্ড ভেঙে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী মোট টাকার ৪৬% লাবসা ইউপিতে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এবার বিনেরপোতা হাট থেকে ৩৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৭২৩ টাকা। যা ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক বিধি বিধান অনুযায়ী ব্যয় করার কথা থাকলেও সেখানে এ নিয়মের কোন তোয়াক্কা করা হয়নি। বিভিন্ন ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে, একই কাজ বার বার দেখিয়ে এবং ভুয়া রেজুলেশন করে গত ১৩ জুন ২৩২৪০৭৪ নং চেকে উক্ত ৩৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৭২৩ টাকা উত্তোলন করেন ইউপি চেয়াম্যান আব্দুল আলিম ও ইউপি সচিব আব্দুর রাজ্জাক। এঘটনায় দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান আলিমের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মানববন্ধন,বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন মহলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু অজানা কারণে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি ইউনিয়নবাসীর। অন্যদিতে গত ২৬ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ খান তদন্ত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে যান। কিন্তু সেখানে ইউপি সদস্যবৃন্দ চেয়ারম্যান কর্তৃক ৪৯ লক্ষ টাকা দুর্নীতির বিষয়ে অবগত করালে তিনি নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বললে মেম্বরসহ স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে অবশ্যই এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে শান্ত হন তারা। সেসময় তিনি বলেন, আমার অফিসিয়াল নিয়মে জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ পরির্দশন করতে হয়। সে রুটিন মাফিক আমি লাবসা ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে এসেছিলাম। এসময় ডিডি এলজির সামনে ইউপি সদস্যরা উক্ত অর্ধকোটি টাকার কাজের বিষয়ে কিছুই জানে না বলে লিখিত দেন। অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের লুটপাটের ঘটনায় প্যানেল চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বাবু বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার পিটিশন- ১/২০১৮, স্মারক নং- ২৩৭৭, তাং- ১৮ মার্চ২০১৮। উক্ত আদালত মামলাটির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দুর্নীতিদন দমন কমিশনকে নির্দেশ দেন। ওই বিএনপি নেতা দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে দুর্নীতিদমন কমিশন(দুদক)সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইউনিয়নবাসী।