চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবস্থান সোমবার রাতে স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের আশ্বাস না মেনে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আবার অবস্থান শুরু করবে আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের অবস্থানের আশপাশে ছাত্রলীগের নেতারা ঘোরাঘুরি করায় তারা নিরাপদ মনে করছে না। তাই আন্দোলন আজকের মতো স্থগিত।
সরকারের আশ্বাসে পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। সোমবার রাত শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও বাংলা একাডেমি এলাকায় অবস্থান নিয়ে তারা স্লোগান দিতে থাকেন। এ তিন স্থানে হাজারো আন্দোলনকারী ছিলেন। কিন্তু রাত বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনকারীদের এ অংশের শিক্ষার্থীরা চলে যতে থাকেন। কমতে কমতে একপর্যায়ে সংখ্যা প্রায় ১০০-তে নেমে আসে। এ সময় আন্দোলনকারীদের এ অংশের মুখপাত্র দাবি করে বিপাশা চৌধুরী নামের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘আমাদের আশপাশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঘোরাঘুরি করছেন। নিরাপদ মনে না করে আজকের মতো আন্দোলন স্থগিত করা হলো।’
বিপাশা চৌধুরী আরও বলেন, তাঁরা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পরদিন ১৬ এপ্রিল ‘চল চল ঢাকা চল’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করবেন।
বিদ্যমান কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, সরকারে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আজকের মধ্যে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে। শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পৃথকভাবে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা এ সিদ্ধান্তকে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা বলেন, এ সিদ্ধান্ত তাঁরা মানতে রাজি নন। কোটা সংস্কারে সুস্পষ্ট আশ্বাস না দিলে তাঁদের পক্ষে এ দাবি মানা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না থাকায় তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
আন্দোলনকারীদের এ অংশটি বলছে, অন্য ইস্যু সামনে চলে এলে এ ইস্যু হারিয়ে যাবে। তবে পরে তাঁরা আন্দোলন মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থগিত করেন।
বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ দফায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার তাঁদের পদযাত্রা ও অবস্থা কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।