ধর্ষণের শিকার নারীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’পদ্ধতি নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। তবে, ধর্ষণের শিকার নারীর পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত হেলথ কেয়ার প্রটোকলে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও শারমিন আক্তার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক।
রায়ে ধর্ষণের শিকার নারীকে পরীক্ষার সময় নারী চিকিৎসক, নারী পুলিশ সদস্য, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, নারী নার্সের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে এই ধরনের মামলার বিচারের সময় আইনীজীবীরা নারীর প্রতি অমার্যাজনক কোনও প্রশ্ন করতে পারবেন না বলেও আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনাটি সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, চিকিৎসক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, প্রসিকিউটরকে কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ নামে ৬টি পৃথক সংগঠন ও দু’জন ব্যক্তি ধর্ষণের শিকার নারীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’-এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা, এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।
পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর রুল জারি করেন। সেখানে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’কেন আইনানুগ কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচিবকে কন্যাশিশু ও নারীদের ধর্ষণের পরীক্ষার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত। তখন তিন মাসের মধ্যে এই কমিটিকে একটি খসড়া নীতিমালা করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এ নির্দেশের পর সরকার হেলথ কেয়ার প্রোটোকল নামে একটি গাইডলাইন তৈরি করে।
এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে মামলাটি রুল শুনানির জন্য আসে। সেই শুনানি শেষে আদালত ধর্ষণের শিকার নারীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’-পদ্ধতি নিষিদ্ধ করে রায় ঘোষণা করলেন।