সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাব ও সম্পাদকদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি, ফোন রেকর্ড

By Daily Satkhira

November 14, 2016

ডেস্ক রিপোর্ট: গত শুক্রবার ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারে সাংবাদিক পরিচয়ে কথিত কবিরাজ আনিছউদ্দীনের কাছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক হন দুই ব্যক্তি। এ ঘটনা ওইদিনই সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়। রোববার আদালত থেকেও জামিনও পেয়েছেন ঐ দুই ব্যক্তি। এদিকে, গতকাল রোববার কোন কোন সংবাদপত্রে ঘটনাটি সাজানো এবং ঐ দুই সাংবাদিককে (একজন একটি পত্রিকার প্রতিনিধি হলেও অপরজনের কোন সাংবাদিক পরিচয় জানা যায়নি) ফাঁসানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে কবিরাজ আনিছউদ্দীন নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। প্রশ্ন হচ্ছে Ñ ওই কবিরাজ যদি কোন অপকর্মের সাথে জড়িত থেকেই থাকেন তারপরও কি তার কাছে চাঁদা চাওয়ার বৈধতা তৈরি হয়? নাকি কবিরাজের অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা উচিৎ? কবিরাজের অবৈধ আয়ের ভাগ নিতে চাওয়া যদি সাংবাদিকের দায়িত্ব হয়ে থাকেÑ তাহলে যে বা যেসকল সাংবাদিক ঐ চাঁদাবাজদের ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছেন তারা নিঃসন্দেহে গুরুত্বর অন্যায় করেছেন! যেহেতু অনেকেই চাঁদাবাজ, তাই সকল সাংবাদিকেরই উচিৎ হবে চাাঁদাবাজ হওয়া! যারা চাঁদাবাজি করবেন না তারাই অপরাধীÑ এমনটি অনেকেই সমর্থন করলেও বিবেকবান কেউই সমর্থন করতে পারছি না। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নামে চাঁদা চাওয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে প্রেসক্লাবের প্রতিনিধিত্ব, ব্যবহার করা হয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার নাম, একাধিক দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের কথা-সাংবাদিকদের পরিচয়। এরপরও আমাদেরকে ওই চাঁদাবাজদের সমর্থন করে কথা বলতে হবে? দৈনিক আজকের সাতক্ষীরার হাতে এসে পৌঁছেছে ওই কবিরাজ ও সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদা দাবিকারীদের মধ্যকার কথোপকথনের ৪টি ফোন রেকর্ড। যা পুলিশের কাছেও রয়েছে। আমরা পাঠকদের বিচারের জন্য এবং সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবসহ যেসকল সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও সংবাদপত্রের নাম ব্যবহার করে চাঁদা দাবি করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে এবিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কথোপকথনের রেকর্ডগুলোর চুম্বক অংশ এখানে হুবহু তুলে ধরছি। আমরা আশা করি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কোন সাধারণ সদস্য চাইবেন না তাদের প্রাণের সংগঠনের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে কেউ এভাবে চাাঁদাবাজি করুক। প্রেসক্লাব ও সংবাদপত্র সাধারণ সাধারণ মানুষের শেষ ভরসাস্থল। তাই এর ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার দায়িত্বও সবার। কথোপকথন: রেকর্ড-০১ চাঁদাবাজ: …সেইভাবে হিসাব-কিতাব করে কথা বলেন। আপনি দরদাম করে ঠিক করেন। কবিরাজ আনিছউদ্দীন:  আমি বুড়া মানুষ অতো হিসাব কিতাব বুঝিনা। তোমরা ঠিক করো কত লাগবে। চাঁদাবাজ- পার ডে(প্রতিদিন) আপনার পাঁচ (৫হাজার)-এর নিচে আসে না কবিরাজ -তালি আমার এ জায়গায় তোমার বসতে হবে কিন্তু। চাঁদাবাজ- (হাসতে হাসতে) আমার সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যে বেলায় বাড়ি ঢুকতে হয়। বাড়ির বাজারও করে খাওয়ার সময় দেয় না লোক আমাদের। ও জায়গায় বসে থাকার… কবিরাজ- বলো, কি বলো বাপ, একটু ভালো করে বলো। চাঁদাবাজ- কীভাবে দেবেন? মাসে মাসে দেবেনÑ না আপনার সুবিধামত? কবিরাজ- পার ডে কখনো সম্ভব হয়না। তুমি যদি বলো না আমি যদি বলি তিন টাকা হয়েছে। তালি কি তুমি বিশ্বাস করবা? চাঁদাবাজ- চাচা আপনি এক কাজ করেন, এখন ১০ হাজার টাকা দেবেন আর ৬ মাস পরে দেবেন। কবিরাজ- একটু কোমায়ে নেবেনÑ তা না হলি আমি কুলোই পারি? চাঁদাবাজ- চাচা কি বলেন আপনি ? তালি আমি এক কথা বলবো? আপনি ঐডা ভাগ করে দেবেন। যেখানে যেতে বলবো সেখানে দিয়ে আসবেন। কবিরাজ- এটা সম্ভব না বাপ। আমি বুড়ো মানুষ, নজর খারাপ। ওরকম সময়তো আমাগের নেই। চাঁদাবাজ- আপনার জাগা বলে দেবো আপনি সেখানে যেয়ে দিয়ে আসবেন। কবিরাজ- ও টা তোমাগের দায়িত্ব। চাাঁদাবাজ- আপনি কি মনে করতেছেন তা কি জানি- কতোরা ডালপালা হয় জানেন? কালকে দেবেন বাকিটা ৬ মাস পরে দেবেন। কাল কখন দেবেন? কবিরাজ- কাল সন্ধ্যে বেলা আসপা। চাঁদাবাজ- কাল কখন আসপো? কবিরাজ- রাত্রিবেলা আইসো। আমি তো মাগরিব পর্যন্ত এদের নিয়ে থাকি। ওদের সামনে কি খেচাখেচি করা যায়? চাঁদাবাজ- চাচা আপনি রেডি থেইকেন আমারা যোগাযোগ করে নেবো। রেকর্ড-০২ কবিরাজ- টাকা ফুরোয়ে গেছিল। চাঁদাবাজ- লুৎফর আছে? কবিরাজ- না ও চলে গেছে। এখান খেকে ১০/১৫ মিনিট আগে। চাঁদাবাজ- ওর কতো টাকা দিতে হয়? কবিরাজ- ওর টাকা দেবো কেন? চাঁদাবাজ- ও কি করতে আসে? কবিরাজ- ও আইছিল ওর প্রয়োজন থাকে, একই গ্রামে বাড়ি। আমার এখানে অনেক লোক আসে। চাঁদাবাজ- ওই মেয়েটা কি করতে আইছিল বলেন দিন? কবিরাজ- ওর শারীরিক সমস্যা। চাঁদাবাজ- ওর বিয়ে হয়েছে? কবিরাজ- ও পড়াশুনা করে। চাঁদাবাজ- প্রেমের কোনো কিছু দেন নাকি? কোন তদবির দেন? কবিরাজ- না চাঁদাবাজ- তালি কামাই কিরাম হয়? এক হাজার টাকা হয়? কবিরাজ- না, মানুষ যেরকম আসে সে রকম হয়। মানুষের ফুঁ দিলে, তেল পানি পড়ে দিলে কি এক হাজার টাকা পাওয়া যায়? ২’শ /১’শ /৫’শ কামাই হয়। চাাঁদাবাজ- এক হাজার টাকা হয়? তালি কি করবেনÑ কবিরাজ- তোমাদের পনে দায়িক্ত দিলাম। চাঁদাবাজ- এতো কথা বলেন কেন? কি করবেন তা বলেন। যা কামাই হয় তার অর্ধেক দেন। কবিরাজ- কতো? চাঁদাবাজ- কতো হয় তা জানি? আপনি যা পারবেন তাই দেবেন। কবিরাজ- তুমি বলো কতো হলি তুমি দায়িত্ব নিতি পারবা। এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। চাঁদাবাজ- তালি ১০ হাজার টাকা দেন। কবিরাজ- ও কি সম্ভবআমার পক্ষে ? চাঁদাবাজ- যদি হয় তালি কালকে বলবেন। কবিরাজ- রাতি কথা হবে। রেকর্ড-০৩ কবিরাজ- সিদ্ধান্ত কিছু করিচাও নাকি? চাঁদাবাজ- কি সিদ্ধান্ত করবো? সিদ্ধান্ত তো আপনার কাছে। কবিরাজ- তোমরা ৪ জন এক জাগায় বসে আমার ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানাও। আমার সব কথাতো তোমাদের বললাম। চাঁদাবাজ- আপনার সাথে একজন লোক ছিল না? ওর কাছে দেন। কবিরাজ- আমরা সবাই এক গ্রামে থাকি। চাঁদাবাজ- সকালবেলাতো সব কথা আপনার সাথে বলি এসেছি। রেকর্ড-০৪ কবিরাজ- কাজ যদি ভাল হয় তাহলে আমার দিতে সমস্যা নেই। চাঁদাবাজ- আমি কি বলি শোনেন। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব থেকে যে লোক আপনার কাছে গেল- সাদা জামা গায়। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে, ব্যাপারটা ওখানে উঠিছে। ঝাউডাঙ্গায় প্রেসক্লাবেরও প্রতিনিধি উনি বুঝতি পেরিছেন। কবিরাজ- ওনার নাম কি? চাঁদাবাজ- ওনার নাম স.ম আমজাদ হোসেন। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের উনি প্রতিনিধি আবার ঝাউডাঙ্গা দক্ষিণের মশালের প্রতিনিধি। এখন সমস্যা হচ্ছে কিÑ ওখান থেকে ব্যাপারটা দেখার কথা বলা হয়িছে। ওখান থেকে ডিবি, এনএসআই প্রত্যেকের প্রেসক্লাবতে বলা হয়েছে এখান থেকে রিপোর্ট যাওয়ার পর ওখানে বসে সিদ্ধান্ত নেবে বুঝদি পেরিছেন। বিকেল বেলা আবার ফোন করিছে। এখন কেতে কি করা যায়? আমি কি বলি শোনেনÑ আপনি ওনাদের সাথে জিনিসটা এ… করবেন। কবিরাজ- আমার বাসায় আইছিলে না? চাঁদাবাজ- আমি সাথে ছিলাম। কবিরাজ- আমি কোটিপতি না লাখোপতি? আমি গরিব মানুষ, তোমরা বোঝ না কেন। চাঁদাবাজ- একটা সত্যি কথা বলবো চাচা? সকাল বেলা আমাদের মোটরসাইকেলে ক্যামেরা-ট্যামেরা সব ছিল। যখন আপনার বাড়ি গিয়ে আপনার ঘর-বাড়ির অবস্থা দেখলামÑ ওখান থেকে ছবিটবি উঠায়ে ওখানে দিয়ার কথা ছেল। কিন্তু আপনার বাড়ির অবস্থা দেখে ওইটা আমাদের নিজেদের খারাপ লেগেছ। এখান তে একটা সিদ্ধান্ত জানাতি হবে। কবিরাজ- তোমার নাম কি? চাঁদাবাজ- জাহিদ হাসান। কবিরাজ- তোমার আব্বার নাম? চাঁদাবাজ- কামরুল মোল্যা। কবিরাজ- তোমাদের মোল্যা পাড়ায় বাড়ি? তোমরা ছোট মানুষ, রাজনীতি করোÑ আমাদের কি মেরি ফেলবা বাপ? চাঁদাবাজ- চাচা বিশ্বাস করেন মাটির পর দাড়ায়ে বলতিছ আপনার অবস্থা দেখে আমাদের খারাপ লেগিছে। ওপরের চাপ আছে, আপনি বুঝতি পেরতিছেন না। সেইভাবে কথা-বার্তা বলেন তা না হলি আরো উপরে চলি গেলি ঝামেলা হবেনি। কাল থানা থেকে এসে একজনের উঠায়ে নিয়ে গেছে। আপনার সব ঠিক আছেÑ কিন্তু কাগজপত্র দেখলি কি বলবেন? কবিরাজ – বাপ আমি গরীব মানুষ। জেল টেল তোমরা খাটাইনা আমার। চাঁদাবাজ- পত্রিকায় রিপোর্ট করলি পার আপনার সমস্যা হয়ি যেতো। এখন আপনি যেভাবে বলবেন আমরা ওপরে কথা বলবো। তা না হলি বিকেলেও ফোন করিছে। কবিরাজ- যেডা ভাল মনে করো সেডা করো। তোমরা আমার একটু সাপোর্ট করবা। চাঁদাবাজ- পত্রিকার সম্পাদকদের ম্যানেজ করতে হয়। এজন্য একটা দফারফা করতে হয়। কবিরাজ- বাজান তোমরা ৪ জনই কি এক পত্রিকার? চাঁদাবাজ- না না, ওর মধ্যি ৩ জন সাংবাদিক আর একজন সাথে ছেল। কবিরাজ- তোমরা কোন কোন পত্রিকায় আছো? তিনজন তিন লাইনি, নাকি এক লাইনি? চাঁদাবাজ-কাফেলা আছে, সাতনদী আছে, আজকের সাতক্ষীরা আছে। কবিরাজ- এর মধ্যি সাংবাদিক কিডা কিডা? নাম বলো- একটু শুনি। তোমরা কিন্তু আমার ছেলের মতোন তাই কথাটা বললাম। চাঁদাবাজ- আপনি কি করতে চান- বলেন দিন। কামরুল, জাহিদ, আমজেদ হোসেন….. কবিরাজ- আর একটা ছেলে ছিল না? চাঁদাবাজ- ও আমাগির মধ্যি না, বন্ধু বান্ধব মানুষ। কবিরাজ- আমার কিছু নেই, মাত্র আধ কাঠা ভিটেবাড়ি। ৭ জন লোক আমার সংসারে খোরাকি। আমি জেলে গেলি এসব লোক তোমাগের খাতি দিতি হবানি। চাঁদাবাজ- আমরা ওপরে কথা বলবানি ওলোক এভাবে করে করমায় খাক।  এখন বাংলাদেশে সবই সম্ভব সমঝোতার মাধ্যমে সব সম্ভব। কবিরাজ- তোমরা বলো যে এই টাকা দিতি হবে… চাঁদাবাজ- আপনার আয়ের পরে ঠিক রেখে আপনার যাতে ক্ষতি না হয় সেইভাবে কথা বলেন। চাচা ধরেন- আপনার কাছে ৫ লাখ টাকা চালাম, আপনার সংসার চালায়ে যা থাকে তার পরতো দিতি হবে। কবিরাজ- তোমরা আলোচনা করি আমার সিদ্ধান্ত দাও। চাঁদাবাজ- আপনার দেখে খারাপ লেগিছে তাই ক্ষতি করিনি। বারবার ওপর তে ফোন করি জানতি চেয়েছে। সেখানে আলোচনা করে দফারফা করতি হবে। ওপরে কথা বলে আপনার পরে জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, কথোপথনের এসকল ব্যক্তির কারও সাথে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কোন সম্পর্ক নেই। আর তাই এবিষয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাদের বক্তব্য। এই ফোন রেকর্ডের বক্তব্য জানিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।” সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান বলেন, প্রেসক্লাবের নাম ব্যবহার করে কেউ চাঁদাবাজি করলে তার দায় প্রেসক্লাব নেবে না। তবে প্রেসক্লাবের নাম যদি কেউ অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে থাকে তাহলে সেবিষয়ে আমরা আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।” অন্যদিকে, দৈনিক দক্ষিণের মশাল’র সম্পাদক আশেক-ই-এলাহী বলেন, “এবিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।”