স্বাস্থ্য

দেশের সবাইকে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনছে সরকার

By Daily Satkhira

April 14, 2018

দেশের প্রত্যেক মানুষকে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইলে শুরু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প সফল হলে সারাদেশে এটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারের এ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতি, মধুপুর ও ঘাটাইলে অতি দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে ‘শেখ হাসিনা হেলথ কার্ড’ বিতরণ করা হয়েছে। ৫০টি রোগের চিকিৎসার খরচ এই কার্ডের মাধ্যমে বহন করবে সরকার। পর্যায়ক্রমে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা টাঙ্গাইলে স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প শুরু করেছি। তিনটি উপজেলায় এটি এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেখানে প্রকল্পের সাফল্য পেলে আমরা সারাদেশে এই কার্যক্রম চালু করবো। আমরা আশা করছি, এর মাধ্যমে দেশের সব নাগরিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন শরীফ হোসেন খান বলেন, ‘প্রথম স্তরে টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে তিন বছর আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপর গত ছয় মাস আগে মধুপুর ও ঘাটাইলে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই তিন উপজেলার অতি দরিদ্র নাগরিকদের প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে স্বাস্থ্যবীমা করে দেওয়া হয়েছে। বীমা গ্রহণকারী পরিবার থেকে কোনও অর্থ দিতে হয়নি। সব অর্থ সরকার দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই বীমার আওতায় মোট ৫০টি রোগের সেবা পাবে ওইসব পরিবার। এসব পরিবারের কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে তার সব ধরনের চিকিৎসা এমনকি অস্ত্রোপচারের খরচ বীমার আওতায় দেওয়া হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য যদি কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগে তবে তা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স-এ না থাকলে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে তার সেই পরীক্ষাগুলো করে দেওয়া হয়। কালিহাতিতে ৩০ হাজার, ঘাটাইলে ১৮ হাজার ও মধুপুরে ১৬ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারকে এই স্বাস্থ্য কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান বা নির্বাহী কর্মকর্তা বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এসব দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের কার্ড করে দিতে সাহায্য করেন।’ শরীফ হোসেন বলেন, ‘উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্ষে তো সব ওষুধ থাকে না। কোনও কোনও উপজেলায় ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী থাকে। এসব রোগীকে আমরা দুই-তিন দিনের বেশি ওষুধ দিতে পারি না। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকও দুই-তিন দিনের বেশি দিতে পারি না। আমরা রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ইনজেকটেবল অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারি না। আমাদের অনেক গর্ভবতী নারীর আলট্রাসনোগ্রাম করা লাগে, কিন্তু এখানে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন না থাকায় তা বাইরে থেকে করতে হয়। কোনও ডেলিভারি রোগী আসলে তার সিজার করাতে হবে। তার সিজারের সব ওষুধ ওই বীমার আওতায় কিনে দেওয়া হয়।’ তিনি জানান, টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে নির্ধারিত ফার্মেসি আছে। সেখান থেকে রোগীরা ওষুধ নেয়। পরে ওই ফার্মেসিকে টাকা পরিশোধ করে দেয় সরকার। রোগীর রোগের ধরন দেখে গুরুত্ব অনুযায়ী রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। শরীফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এটি পাইলট প্রকল্প। এটি সফল হলে সারাদেশে সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এমনই পরিকল্পনা রয়েছে। এটি পাঁচব ছর মেয়ামি প্রকল্প হিসেবে ধরা হয়েছে।’ হেলথ রাইটস মুভমেন্ট-এর প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশে সেভাবে স্বাস্থ্যবীমা চালু নেই। উন্নত বিশ্বে সব চিকিৎসার জন্য বীমা আছে। কোনও বীমা স্থানীয় সরকারের আওতায়, কোনও বীমা কোনও ইন্সটিটিউটের আওতায় চলমান।’ তিনি বলেন, ‘কোনও দেশকে স্বাস্থ্যবীমা করাতে গেলে একটা ন্যূনতম মাথাপিছু আয় থাকতে হয়। বলা হয়, মাথাপিছু আয় ছয় হাজার ডলার হলে ;স্বাস্থ্যবীমা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থা তো তেমন নয়। তাই এখানে সেভাবে স্বাস্থ্যবীমা চালু হয়নি। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু কর্পোরেট অফিসে কিছু গ্রুপ বীমা রয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই দেশে স্বাস্থ্যবীমা নেই বললেই চলে। আর সরকারিভাবে টাঙ্গাইলে যেটা চালু হয়েছে তা পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এটা সাফল্য পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার।’