গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন এবং ইভিএম ব্যবহার বন্ধে বিএনপির দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদকে প্রত্যাহারের যে দাবি বিএনপি করেছে, সে বিষয়ে কমিশন সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আসন্ন দুই সিটি নির্বাচনে ভোটের সাত দিন আগে সেনা মোতায়েনের দাবি জানানোর পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহার না করা এবং গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারসহ ২০ দফা লিখিত দাবি ইসির সামনে তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকের পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু প্রস্তাব কমিশন আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, পর্যবেক্ষণকদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাসহ অনেক সুপারিশ ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করা হবে।” তবে ইভিএম, সেনা মোতায়েন ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবির বিষয়গুলো নিয়ে পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বিএনপিকে বলেছে কমিশন। এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা ইসির নেই। ইভিএম এর মতো প্রযুক্তি আইনানুগভাবে ব্যহার করা হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে। এরপরও এ নিয়ে আপত্তি থাকলে বিএনপিকে আবারও এসে ইভিএম দেখার অনুরোধ করা হয়েছে।” গাজীপুর এসপি হারুন অর রশীদের নাম উল্লেখ না করে ইসি সচিব বলেন, তার বিষয়ে বৈঠকে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি ইসি। “এসব বিষয় আইন-বিধির সঙ্গে যুক্ত। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা নিয়ে কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে” বলেন হেলালুদ্দীন। বিএনপি বলেছে, এসপি হারুনকে গাজীপুর থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে ‘পক্ষপাতিত্বের’ কারণে কমিশন তাকে একবার প্রত্যাহার করেছিল। ‘তার মত’ সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের ‘চিহ্নিত কর্মকর্তাদের’ বদলি করে ‘পেশাদার’ কর্মকর্তা দিতে হবে খুলনা ও গাজীপুরে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধিদলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে স্থানীয় ভোটে সেনা মোতায়েন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান এর বিপরীতে। প্রধান নির্বাচন কমিশন কে এম নূরুল হুদা নিজেও সম্প্রতি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি সেনা মোতায়েনের পক্ষে নন। ১৫ মে ভোটের দিন রেখে দুই সিটির নির্বাচনের যে তফসিল নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ঠিক হয়েছে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে গাজীপুরে এম এ মান্নান এবং খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি বিএনপির মনোনয়নে ভোটে জিতে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তাদের বদলে গাজীপুরে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন হাসানউদ্দিন সরকার; আর খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোটার আছেন ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। আর খুলনা সিটির ৩১টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ জন। ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল গাজীপুর সিটি করপোরেশনে এবং খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুস আলী খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।