কালিগঞ্জ

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ইটভাটায় অনুমতি ছাড়া কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ !

By daily satkhira

April 18, 2018

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই কৃষি জমি নষ্ট করে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে চলছে মিনি ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ। ফলে ভাটা সংলগ্ন লোকালয়ের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইটভাটা তৈরিতে আবেদন পত্রের সঙ্গে নির্দিষ্ট ফি জমা দেওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের অনুমোদনের পর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে হয়। এরপর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদনপক্ষে গেলে ওই ব্যক্তি ভাটা নির্মাণ করতে পারবেন। নীতিমালায় লোকালয়ের বাইরে এক একরের বেশি ও তিন একরের কম জমি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কেউ ইটভাটা নির্মাণ করতে পারবেন না। ভাটায় জ্বালানী কাঠের ব্যবহার ও কৃষি জমির মাটি ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি। তাছাড়া বর্তমানে পরিবেশ বান্ধব ঝিকঝাক ভাটা ছাড়া পুরাতন পদ্ধতিতে ভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়না। সরেজমিনে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের শাহাপুর জামাইঘাটায় যেয়ে দেখা গেছে বালিয়াডাঙা বাজার থেকে নেঙ্গীগামী রাস্তার বাম পাশে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মিনি ইটভাটা। সেখানে কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন কেএম১৭ ব্রাণ্ডের ইট তৈরি করছেন। ইট তৈরির কাজে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫জন শ্রমিক কাজ করছেন। ইট পোড়াতে কয়লা নয়, ব্যবহৃত হচ্ছে ফলজ ও বনজ গাছের গুড়ি ও ডাল। শাহাপুর জামাইঘাটায় কেএম ব্রাণ্ডের ইট প্রস্তুতকারি শ্রমিক কালিগঞ্জ উপজেলার শঙ্করপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদ তরফদারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৩২), একই গ্রামের মনসুর কাগুচীর ছেলে মুজিবর রহমান(৪৫), রামনগর গ্রামের হযরত কাগুচির ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন(৪০) ও মিজানুর রহমান (৫০) জানান, পার্শ্ববর্তী সাপমারা খাল ও খালের পার্শ্ববর্তী কৃষি জমির উপরের অংশের মাটি কিনে তারা ভাটায় নিয়ে এসে যন্ত্রের মাধ্যমে ইট তৈরির মাটি প্রস্তুত করে থাকেন। মজুরি বাবদ মাটি প্রস্তুত থেকে শুকানো পর্যন্ত তারা প্রতি হাজারে নয়শত টাকা দেওয়া হয়। ইট পোড়াতে আম, জাম, খেজুর, নারিকেল, কাঁঠাল, সৃষ্টিফুল গাছের গুড়ি ও ডাল ব্যতীত কোন রকম কয়লা ব্যবহার করা হয় না। গত বছর থেকে এ ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। বছরে ছয় মাস এ ভাটায় কাজ চলে। শাহাপুর জামাইঘাটার রমজান আলী, স্কুল ছাত্র তকিবর রহমান, গৃহবধু ফাতেমা খাতুনসহ কয়েকজন জানান, কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ২০১৭ সাল থেকে তিনি জামাইঘাটায় লোকালয়ের মধ্যে কৃষি জমিতে মিনি ভাটা তৈরি করে জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। এ ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা উপজেলা প্রশাসনের কোন অনুমতি নেই। কৃষি জমি নষ্ট করে লোকালয়ের মধ্যে এ ভাটা নির্মাণ করায় ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয় না। লোকালয়ের পাশে এ ভাটা হওয়ায় গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ভাটায় কাঠ ব্যবহার হওয়ায় এলাকায় বনজ ও ফলজ গাছ কমে যাচ্ছে। এখনি এ ভাটা বন্ধ না করা গেলে আগামিতে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মোশাররফ হোসেন এ ধরণের ভাটা পরিচালনা করে আসছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। জানতে চাইলে কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন জানান, তিনি গত বছর থেকে মিনি ভাটায় ইট পোড়াচ্ছেন। জ্বালীনী কাঠ পোড়ানো ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ইট পোড়ানোর কথা অস্বীকার না করেই বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পাওয়ার জন্য তিনি সম্প্রতি আবেদন করেছেন। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মঈনুদ্দিন হাসান জানান, মোশাররফ হোসেনের ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসনের কোন অনুমোদন নেই। বিষয়টি অবগত রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকার পরও ওইসব ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।