পাটকেলঘাটা

স্বামীর নির্যাতনে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন জেসমিন

By daily satkhira

April 18, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোলে আট মাসের কণ্যা খাদিজাকে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের দোতলার সার্জারী বিভাগের ২নং শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তালা উপজেলার যুগীপুকুর গ্রামের আব্দুল গফুর মোড়লের স্ত্রী জেসমিন খাতুন (২৪)। জামাতার নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে যেয়ে আহত হয়ে মা মনোয়ারা খাতুনও বসে রয়েছেন মেয়ের বিছানায়। বুধবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে টাকার দাবিতে যখন তখন স্বামীর হাতে নির্যাতনের করুন কাহিনী বর্ণনা করেন জেসমিন। সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের মনিরুদ্দিন ঢালীর মেয়ে জেসমিন। কলারোয়ার গনপতিপুর গ্রামে প্রথম বিয়ে হলেও স্বামীর প্রথম স্ত্রী ফিরে আসায় তার সংসার টেকেনি। দু’ বছর আগে তাকে পাটকেলঘাটার যুগিপুকুরিয়া গ্রামের অজিয়ার মোড়লের ছেলে চা বিক্রেতা আব্দুল গফুরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। গফুরের প্রথম স্ত্রী জুলেখা ক্যান্স্যার রোগে মারা যায়। বিয়ের পর থেকে জেসমিন বাপের বাড়িতে থাকতো। একপর্যায়ে ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার পর জেসমিনকে বাড়িতে নিয়ে যায় গফুর। আট মাস আগে খাদিজার জন্ম হওয়ার পর থেকে গফুর তাকে বাপের বাড়ি থেকে বার বার টাকা আনার জন্য চাপ দিতো। বাবা না থাকায় মায়ের দেওয়ার ক্ষমতা নেই বলায় তাকে প্রায়ই মারপিট করা হতো। একইভাবে গত সোমবার সকালে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। খবর পেয়ে মা মনোয়ারা ছুঁটে এলে তাকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। মাকে আটকে রাখা হয় একটি ঘরের মধ্যে। মঙ্গলবার তাকে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করা হয়। বাম হাত, পিঠ, কোমরসহ শরীরের বিভিন্নর স্থানে রক্তাক্ত জখম জায়গা দেখাতে যেয়ে জেসমিন তার সন্তান খাদিজাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, বাচ্চাটার জন্যই তো বেঁচে থাকা। নইলে এত নির্যাতন সহ্য করা যায় কি! মেয়ের কথা শেষ না হতেই মা মনোয়ারা তার ও মেয়ের উপর নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন। মেয়েকে নির্যাতন করলে দেবর, চাচা শ্বশুরসহ প্রতিবেশিরা কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। মঙ্গলবার রাতে আটক রাখায় কোন প্রকারে কৌশলে বুধবার সকালে হাসপাতালে এসেছেন। জানতে চাইলে মনোয়ারার দেবর রুহুল আমিন, চাচা শ্বশুর মোহাম্মদ আলী ও কোটো বলেন, সিজারে জন্ম দেওয়া বাচার মা মনোয়ারাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয় তাতে কখন না জীবনটা হারিয়ে যায়। প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে নানান কথা শুনতে হয়। জানতে চাইলে পাটকেলঘাটা বাজারের চা বিক্রেতা আব্দুল গফুর বলেন, তার স্ত্রী ইচ্ছামত চলাফেরা করে। টাকার দাবিতে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, মনোয়ারার সঙ্গে তার বচসার একপর্যায়ে তিনি কয়েকটি চড় মেরেছেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ হাফিজুল্লাহ জানান, ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে মনোয়ারার শরীরের কয়েকটি স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।