ভিন্ন স্বা‌দের খবর

বিশ্বের একমাত্র হাতে লেখা পত্রিকা

By Daily Satkhira

April 19, 2018

ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ফলে বর্তমানে যখন পৃথিবী থেকে হাতের লেখাই উঠে যাওয়ার উপক্রম, তখন ভারতের চেন্নাইয়ে আজও একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা প্রতিদিন হাতে লিখে প্রকাশ করা হয়।

পত্রিকাটির নাম দ্যা মুসলমান। এটি উর্দু ভাষায় হাতে লেখা একটি দৈনিক সংবাদপত্র। ১৯২৭ সালে সৈয়দ আজমতুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এর সম্পাদনার দায়িত্বে আছেন তাঁর নাতি সৈয়দ আরিফুল্লাহ, যিনি তাঁর পিতার মৃত্যুর পর এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।

তিনজন বিশেষজ্ঞ ক্যালিগ্রাফার সংবাদপত্রটি লেখার কাজ করেন, যাঁদের বলা হয় কাতিব। একেকজন কাতিব একেকটি পৃষ্ঠা লেখার দায়িত্বে থাকেন। প্রতি পৃষ্ঠার জন্যে তাঁরা ৬০ রুপী পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। আর সংবাদ সংগ্রহ করেন তিনজন প্রতিবেদক বা সংবাদদাতা।

১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতের সকল উর্দু সংবাদপত্রই হাতে লিখে প্রকাশ করা হতো। পরবর্তীকালে অন্যান্য উর্দু সংবাদপত্র আধুনিক মুদ্রণপ্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিলেও দ্যা মুসলমান ঠিকই প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। চার পৃষ্ঠার এই সান্ধ্য দৈনিকটি আজও হাতে লিখে প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি পত্রিকার বিজ্ঞাপনগুলো ডিজিটাল আকারে জমা দেওয়া হলেও পত্রিকায় সেগুলো হাতে এঁকে প্রকাশ করা হয়। লেখা শেষ হওয়ার পর এর নেগেটিভ থেকে প্রিন্টিং প্লেট প্রস্তুত করা হয়, আর এভাবেই ১৯২৭ সাল থেকে আজ অবধি প্রতিদিন পত্রিকাটি প্রকাশ হয়ে আসছে।

অতীতে কোনো ব্রেকিং নিউজ দেরি করে পৌঁছলে সেটির জন্যে পুরো একটা পৃষ্ঠা আবার নতুন করে লিখতে হতো। কিন্তু এখন পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠার এক কোণায় কিছুটা জায়গা ব্রেকিং নিউজ প্রকাশের জন্যে ফাঁকা রাখা হয় এবং বিকেল ৩টার আগে নিউজরুমে কোনো ব্রেকিং নিউজ এলে তা ওই জায়গাটিতে যোগ করে দেওয়া হয়।

৮০০ বর্গফুটের সীমিত পরিসরে সংবাদপত্রটির এক কক্ষবিশিষ্ট কার্যালয়। কিন্তু তাতে তাঁদের কাজের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। পত্রিকার কর্মীরা তাঁদের কাজের প্রতি একনিষ্ঠ, বিশ্বস্ত এবং তাঁদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাঁরা এ কাজ করে যেতে চান বলে জানান প্রধান প্রতিবেদক রেহমান হুসেইন।

হায়দ্রাবাদ, কোলকাতা, মুম্বাই, নিউ দিল্লীসহ সমগ্র ভারতেই দ্যা মুসলমানের সংবাদদাতা রয়েছেন। এসব এলাকায় পত্রিকাটির গ্রাহকও রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম, তবে উর্দু ভাষা জানেন এমন হিন্দু গ্রাহকও কম নয়।

সংবাদপত্রটির মোট গ্রাহকসংখ্যা ২৩০০০। এছাড়া যাঁরা এর নিয়মিত গ্রাহক নন, তাঁরা পত্রিকার দোকান থেকে মাত্র ৭৫ পয়সা মূল্যে এটি সংগ্রহ করতে পারেন। পত্রিকাটির মূল্য খুব কম হলেও অধিকাংশ সরকারী এবং কিছু বেসরকারী বিজ্ঞাপন সংস্থা থেকে যে অর্থ আসে, তা কর্মীদের বেতন দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।

সাধারণভাবে পত্রিকাটি সাদা-কালো, তবে বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনে এটি রঙিনও করা হয়ে থাকে।