মো. রাসেল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ায় যৌতুকের দাবীতে নিজ স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী রিপন হোসেন(৩৮)। হতভাগ্য স্ত্রীর নাম জোহরা খাতুন(৩৪)। সে বেনাপোল পোর্ট থানার বালুন্ডা গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে। আর পাষন্ড স্বামী রিপন হোসেন শার্শা থানার বাগআঁচড়া সাতভাই পাড়া এলাকার মোসলেম গাজীর ছেলে। প্রতিবেশিরা ও নিহত জোহরার স্বজনেরা জানায়, দীর্ঘ ১৭ বছর আগে শার্শার বাগআঁচড়া এলাকার মোসলেম গাজীর ছেলে রিপনের সঙ্গে বালুন্ডা গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে জোহরা খাতুনেরর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী রিপন যৌতুকের দাবিতে ব্যাপক নির্যাতন করতে থাকে। প্রায়শই রিপনের চাহিদামত যৌতুক মেটাতে হতো জোহরার বাপের বাড়ির থেকে। যৌতুক না পেলে রিপন ক্ষিপ্ত হতো এবং স্ত্রী জোহরার উপর অমানুষিক নির্যাতন করতো। এনিয়ে পারিবারিক ভাবে ও গ্রাম্য শালিসে বহুবার মিমাংসা করা হয়েছে। এর মধ্যে জোহরা একটি পুত্র সন্তানের মা হলে তার তার উপর নির্যাতনের মাত্রা ব্যাপক বেড়ে যায়। বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে জোহরার বাপের বাড়ির লোকজন ব্যাপক টাকা খরচ করে রিপনকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে ২বছর আগে বাড়ির এসে আবারো স্ত্রী জোহরার উপর যৌতুকের দাবীতে ব্যাপক নির্যাতন করতে থাকে জোহরা মারধোর সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার বাপের বাড়িতে চলে যায়।রিপন আবার হাতে পায়ে পড়ে বিচার শালিস করে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু কয়েকদিন ভালো থাকার পর আবার শুরু হয় নির্যাতন। এর মধ্যে এক বছর আগে তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু দিন দিন যৌতুকের দাবীতে রিপনের নির্যাতন বাড়তে থাকে। সেই নির্যাতন শেষ হয় শুক্রবার(২০এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে প্রতিবেশীরা ঘরের আড়ার সাথে উড়না দিয়ে ঝুলানো লাশ উদ্ধার করে। নিহত জোহরার ছেলে হৃদয়(১৩) বলেছেন, কাল রাতে আব্বা আমার মাকে খুব মেরেছে। নিহত জোহরার মা মেহেরুন জানান, আমরা আমাদের বড় মেয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে দান সামগ্রী দেওয়ার পরও আমার মেয়ের উপর যৌতুকের জন্য ব্যাপক নির্যাতন করে। রিপন যখন আমার মেয়ের মারে তখন রক্ত রক্ত হয়ে যায়। এরপরেও আমরা তার ছোট বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওরা আমার সোনাকে মেরে টাঙিয়ে রেখেছে।নিহত জোহরার পিতা নুর ইসলাম অভিযোগ করেন আমার মেয়েকে বিয়ের পর থেকে রিপন ব্যাপক মারপিট করে এবং শেষ পর্যন্ত মেরে ঘরে টাঙিয়ে রেখেছে। নিহতের খালা বেনাপোলের বাসিন্দা শেফালি বলেন, আমার বোনজিকে মেরে টাঙিয়ে রেখেছে, জোহরার সমস্ত দেহে রক্ত জমে গেছে এটা আমি ও আমাদের মহিলা মেম্বর সারা শরীর উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখেছি তার সমস্ত শরীরে ক্ষতস্থান ও রক্ত জমে গেছে। জোহরার ভাই আব্দুল গফফার, মামা টেংরা গ্রামের হাবিবুর ও ফুপু শহরবানু জোহরাকে খুন করা হয়েছে মর্মে একই অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে লাশের সুরতহাল কারী এস আই সাজ্জাদুর রহমান বলেন সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের শরীরে অসংখ্যা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এব্যাপারে শার্শা থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ঘাতক রিপন তার পরিবারের লোকেরা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।