আশাশুনি

আশ্রমে কিশোরী ধর্ষণ; ভারতীয় ভণ্ড ধর্মগুরুর যাবজ্জীবন

By Daily Satkhira

April 25, 2018

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অবশেষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন স্বঘোষিত ভারতীয় ‘ধর্মগুরু’ আসারাম বাপু। ২০১৩ সালে যখন পুরো ভারতবাসী স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছিল তখন আসারাম তার আখড়ায় নাবালিকা মেয়ে ধর্ষণে লিপ্ত ছিল। ৭৭ বছর বয়সী এই ‘গুরু’র বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশের শাহাজাহানপুরের নিজ আশ্রমে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেন তিনি। বুধবার আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তবে তার সাজার মেয়াদ এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ডাদশে হতে পারে তার। সাজার ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি আদালতের বিবেচনায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার পক্ষের আইনজীবীরা এই বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছিল। নারী ভক্তদের আসারাম বলতেন- আমি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মানব রূপ আর তোমরা সবাই মেয়েরা হলে আমার গোপীনি। ভক্তদের ভোগের সামগ্রী বা গোপীনি মনে করা এই ‘কলির কৃষ্ণ’ শুধু শাজাহানপুরের ওই কিশোরী নয়, আরও বেশ কয়েকজন ভক্তেরই সম্ভ্রমহানি করেছেন। একই অভিযোগে অভিযুক্ত তার গুণধর পুত্রও। ধর্ষণপীড়িত কিশোরী গুরুকুলের ছাত্রী ছিল। সে মিডিয়াকে জানায়, যখন সে আশ্রমে প্রবেশ করে তখন তাকে প্রসাদের সঙ্গে এমন কিছু খাইয়ে দেওয়া হয় যে সে সম্মোহিত হয়ে পড়ে। এরপর সে আশ্রমে থাকার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সে আরও জানায়, আসারাম ও তা ছেলে দুজনই নিজেকে ভগবান দাবি করতো। সে আরো জানায়, রাতের বেলা আসারাম টর্চ হাতে আশ্রমে ঘুরতো। যেসব মেয়েকে তার পছন্দ হতো তাদের ওপর টর্চের আলো ফেলতো। এরপর তার অনুসারীরা ওই মেয়েদের ডেকে আসারামের কাছে সমর্পন করা হতো। আসারাম নারী নিগ্রহ আর শ্লীলতাহানির অপকর্ম অনেক করেছে। তবে ধরা খেয়ে যায় ওই কিশোরীর ক্ষেত্রে এসে। এই ঘটনার শুরু ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট। মধ্যপ্রদেশের ছিন্দবারা এলাকায় আসারামের অধীন গুরুকুল থেকে সেদিন একটি কল আসে ওই কিশোরীর বাবার সেলফোনে। বলা হয়, গুরুকুলের ছাত্রী তাদের কন্যা অসুস্থ। তার ওপর ভূত-প্রেত আসর করেছে। তবে তার চিকিৎসা গুরু আসারাম করতে পারবেন। এমন খবরে বা-মা হন্তদন্ত হয়ে ছিন্দবারায় হাজির হন গুরুকুলে। সেখাকার তত্ত্বাবধায়করা তাদেরকে পরামর্শ দেয় কন্যাকে নিয়ে আসারামের দরবারে যেতে। তখন যোধপুরে অবস্থান করছিল আসারাম। ১৪ আগস্ট কন্যাকে নিয়ে তারা যোধপুরের মানাই আশ্রমে হাজির হন। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন আসারাম যে অনুষ্ঠান করেন তাতে বেশকিছু মেয়েকে নিয়ে আসা হয়। এফআইআর এবং চার্জশিট মোতাবেক, মেয়েদের নিয়ে আসারামের খাস কামরা প্রবেশ করানো হয় আর তাদের অভিবাকদের বলা হয় বাইরে ধ্যানে বসে যেতে। এরপর নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মেয়েদের ওপর হামলে পড়তো সে। এসময় তাদের নানান ভয়ভীতিও দেখানো হতো। ঘটনার শিকার মেয়েকে নিয়ে ‘গুরু’র দরবার থেকে ১৬ আগস্ট শাহজাহানপুরের বাড়িতে রওনা হয় বাবা-মা। বাড়ি এসে মেয়েটি তাদেরকে জানায় আগেরদিন তার ওপর কী জঘন্য ঘিনঘিনে ঘটনা ঘটে গেছে। ঘটনা শুনে তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। যাকে নিজেদের সবকিছু মনে করতেন- সেই লোকই তাদের নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে এমন জঘন্য কাজ করেছে! তারা আসারামের কাছে ঘটনা জানার জন্য ছুট লাগায়। কিন্তু ধর্ষক-গুরু তখন দিল্লির আশ্রমে। তারা দিল্লিতেই হাজির হন ১৯ আগস্ট। সেখানে আসারামের চেলারা তাদের বাধা দেয়ে। খবর পেয়ে আসারাম আত্মগোপনে যায়। পরদিন, ২০ আগস্ট তারা আসারামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আসারামকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত, তবে ভক্তরা তার মুক্তির আশায় প্রাথনায় রত ছিল -ফাইল ফটো দিল্লির কমলা মার্কেট থানায় দায়ের করা নাবালিকা ধর্ষণ মামলায় তার সঙ্গে আরো তিন সহযোগীও দোষী সাব্যস্ত হয়েছে আর খালাস পেয়েছে দুই জন। মামলাটি পরে যোধপুরে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৩ সারের ৩১ আগস্ট আসারামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং তারপর থেকে সে যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিল। আসারামের বিরুদ্ধে মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর আর গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। দেশজুড়ে তার ভক্ত অনুসারীরা ‘গুরু’র বিচারের বিরেুদ্ধে ব্যাপক বিরোধীতায় অবতীর্ণ হয়। একইসঙ্গে চলে তার মুক্তির জন্য দলে দলে প্রার্থনা। প্রসঙ্গত, গুজরাতের সুরাতেও আসারাম এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন দুই বোন। বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে গত চার বছরে এই দুই মামলার ৯ জন সাক্ষীর ওপর হামলা হয়েছে। মারা গেছেন ৩ জন। রায় ঘোষণার পর ধর্ষণপীড়িত মেয়ের বাবা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই বলে যে শেষতক আসারাম দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বিচার পেয়ে গেছি। একই সঙ্গে এই লড়াইয়ে যারা তার সঙ্গ দিয়েছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আলোচিত এই মামলার রায়ের দিন আদালত বসে জেলে। জোধপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ভিতরেই আসারামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় রায় দেয় বিশেষ তফসিলি আদালত। এ বাবদে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয় জেলকে ঘিরে। বিচারক মধুসূদন শর্মাকেও বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। অপরদিকে, রায়কে ঘিরে আসারামের সমর্থকরা যাতে গোলযোগ সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে কড়া নজর রাখছে পুলিশ। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জোধপুর জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। শহরে সব বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। হোটেল ও ধর্মশালায় কারা আসা-যাওয়া করছেন, নজর রাখা হচ্ছে সে দিকেও। শহরের বাইরে পল রোডে আসারামের আশ্রম। দাঙ্গার আশঙ্কায় সেটিও ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে। দাঙ্গার আশঙ্কায় উত্তরপ্রদেশে ওই নিগৃহীতার বাড়ির বাইরেও মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ১২ বার জামিনের আবেদন করেছেন আসারাম। তবে এই ধর্ষক-গুরুর আবেদন খারিজ হয়েছে প্রতিবারই।