অনলাইন ডেস্ক: দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব আনার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে ছাত্রলীগে ভোট প্রক্রিয়া চালু হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরামর্শেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত তিনটি সম্মেলনে এভাবেই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরা এই ভোটে অংশ নেন। তবে যে লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা গত তিনটি কমিটি তা পূরণ হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। দলীয় সভাপতিও তেমনটাই মনে করেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে। ফলে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে আবার সিলেকশন পদ্ধতির দিকে ফিরে যাওয়া হচ্ছে। আসন্ন ২৯তম সম্মেলন থেকেই এটা কার্যকর হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় একটি অংশও ভোট বিরোধী। ওই অংশটি গত তিনটি কমিটির কার্যক্রম তুলে ধরে ভোটে নেতা নির্বাচনের নানা কুফল শেখ হাসিনার সামনে তুলে ধরেন। তারা মনে করে, ভোট প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ভোটের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নানা কৌশলে ব্যর্থ নেতৃত্ব বের করে আনা হয়েছে। তাই ভোট প্রক্রিয়া আপাতত বাদ দিতে আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পারিবারিকভাবে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, পরিবার থেকেই মুজিব আদর্শে অনুপ্রাণিত, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ এবং শিক্ষিত মার্জিত ছেলে মেয়েদেরকেই নেতা হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এসব যোগ্যতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নয়, এমন কেউ পাওয়া গেলেও নেতা হওয়ার সুযোগ থেকে যাবে। জানা গেছে, ভোট পদ্ধতিতে ব্যর্থ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসার ফলে এখন বাধ্য হয়েই ভোট প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকরা। সংগঠনে গণতন্ত্রের চর্চা করতে ভোট প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেও নেতৃত্ব নির্বাচনে গত তিনটি সম্মেলনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না আসায় আবারও সিলেকশন পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট প্রক্রিয়া আর থাকছে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেকশনে পদ্ধতি এই সংগঠনের নেতা বের করে আনবেন। আরও বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, সর্বশেষ দু’টি সম্মেলনে ভোটে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে কলুষিত করা হয়েছে। দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের বদৌলতে অদক্ষ, অযোগ্য, অসাংগঠনিক, ভিন্ন চিন্তা-চেতনা এবং ভিন্ন আদর্শের ছেলেরা ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে নানা দুঃষ্কর্মের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। অনুপ্রবেশের সুযোগটিও ভোট প্রক্রিয়ার ফলে এসেছে। তাই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে এবার ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন না করার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন এবার ভোটে হবে না। দ্বিতীয় অধিবেশন শেষ করে প্রস্তবিত নামগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দুই জন নেতা নির্বাচন করবেন। তাদের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব অর্পণ করবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সদস্য বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ কোনও ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বরং ছাত্রলীগই এই আন্দোলনে ইন্ধন যুগিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা মনে করেন, দুর্বল নেতৃত্ব থাকার কারণে এই আন্দোলনে ছাত্রলীগের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বিষয়টি শেখ হাসিনাকে হতাশ করেছে। ওই দুই নেতা আরও বলেন, শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছন ভোটের সুযোগ নিয়ে দুর্বল নেতারা নেতৃত্বে এসেছে। অনুপ্রবেশের সুযোগটিও এসেছে ভোট পদ্ধতিতে। তাই এ পদ্ধতি আপাতত স্থগিত করতে তিনি ইতিমধ্যেই সম্মত হয়েছেন। শেখ হাসিনা এবার ছাত্রলীগের সম্মেলন দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন কেন্দ্রের অনেক নেতাকে। তাদের কাছে ইঙ্গিত রয়েছে ছাত্রলীগের এবারের নেতা নির্বাচিত হবে সিলেকশনে। শেখ হাসিনা নিজেই এবার নেতা সিলেকশন করবেন।