স্বদেশ: প্রেমঘটিত কারণে মেয়ের প্রেমিককে গলা কেটে হত্যা করেছেন এক বাবা। নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার চকাবির গ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের প্রেমিকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বাবাকে আটক করে পুলিশ। এরপর প্রেমিকার বাবা মোহাম্মদ আলম পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর পুলিশ প্রেমিকার বাবাসহ স্কুলছাত্র আহসান হাবিব বিদ্যুতের খুনের সঙ্গে জড়িত অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। নওগাঁর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোজাম্মেল হক আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, শ্বশুরের লাশ পৃথিবীতে রেখেই প্রেমিকার বাবা মোহাম্মদ আলম নিজেই গলা কেটে স্কুলছাত্র বিদ্যুৎকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে একই গ্রামের বুলু, তছলিম এবং আমজাদ আলমকে সহযোগিতা করে। জিজ্ঞাসাবাদের কথা উল্লেখ করে মো. মোজাম্মেল হক জানান, বদলগাছি উপজেলার কোলা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে আহসান হাবিব বিদ্যুৎ চকাবির গ্রামে নানাবাড়ি থেকে বালুভরা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ত। একপর্যায়ে ওই গ্রামের মোহাম্মদ আলমের নবম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এ সম্পর্কের কথা মোহাম্মদ আলম সম্প্রতি জেনে গিয়েছিলেন। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদ আলমের শ্বশুর মারা গেলে তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই সেখানে চলে যায়। পরীক্ষার জন্য তাঁর নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে তখন বাড়িতেই ছিল। এ সময় বাড়ি ফাঁকা পেয়ে মেয়ে মোবাইল ফোনে প্রেমিক বিদ্যুৎকে ডেকে আনে। এর মধ্যে কোনো কাজে বাড়ি ফিরে আসেন মোহাম্মদ আলম। এসে মেয়ের শয়নকক্ষে অন্য কণ্ঠ শুনতে পেয়ে নিশ্চিত হন ঘরের মধ্যে কেউ আছে। এরপর জোরপূর্বক মেয়েকে পাশের চাচার বাড়িতে রেখে আলম একই গ্রামের বুলু, তছলিম ও আমজাদকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ের ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা বিদ্যুৎকে বের করে মাঠের মধ্যে নিয়ে যান। সেখানে বুলু পা এবং তছলিম ও আমজাদ দুই হাত এবং মাথা ধরে রাখে। পরে আলম ছুরি দিয়ে বিদ্যুৎকে গলা কেটে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর আলম তাঁর তিন সহযোগীর সঙ্গে বিল পার হয়ে হেঁটে শ্বশুড়বাড়ি চলে যান। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের মাঠে বিদ্যুতের লাশ পাওয়ার পর আলমের মেয়ে নিশ্চিত হয় যে তার বাবাই বিদ্যুৎকে হত্যা করেছেন। এরপর পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে এলে মেয়ে বাবার বিচার দাবি করে। মেয়ের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোহাম্মদ আলমকে আটক করা হলে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে খুনের বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি দেন। পরে তাঁর জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ডে অপর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।