রাজধানীর মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের এক ছাত্রীকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিকের মারধরের ভিডিও প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী। শুভ্রা মাহমুদা নামে ওই ছাত্রী বৃহস্পতিবার (৪ মে) তার ফেসবুকে এই ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, অনিক ও তার এক সহযোগী রুটি তৈরির বেলুনি দিয়ে শুভ্রা ও তার এক রুমমেটকে বেধড়ক মারধর করছে। ভিডিওটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। গত বছরের ২৪ অক্টোবর দুপুরে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি মুজিবর রহমান অনিক কয়েকজনকে নিয়ে শুভ্রার বাসায় গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে মুজিবর রহমান অনিককে বহিষ্কার করা হলেও সম্প্রতি সেই বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। নির্যাতনের শিকার শুভ্রা মাহমুদা বাদী হয়ে দারুস সালাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। ভিডিওতে থাকা ওই তরুণী এবং ছাত্রলীগ নেতা অনিকের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে মুজিবর রহমান অনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও মারধরের কথা অস্বীকার করেছে।
নির্যাতনের শিকার বাঙলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ্রা মাহমুদা জানান, মিরপুরের দারুস সালামের ৭৭/এ নম্বর বাসার ৫ম তলা ভাড়ায় থাকতেন তিনি। গত বছরের ২৪ অক্টোবর দুপুরে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি মুজিবর রহমান অনিক ও শেখ রাশেদ রহমান, ফয়েজ আহম্মেদ নিঝু, সাদেক প্রধানীয়া, মাসুম রাজু, জিলেন হাওলাদার, রিয়াদ হোসেন ও হাফিজ হাওলাদার মিলে তার বাসায় গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে। রুটি বেলুনি দিয়ে মারধরের পাশাপাশি কিল-ঘুষি ও গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করে তারা। পরে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করলে তিনি থানায় গিয়ে এ ঘটনায় মামলা (নম্বর ৩৭) দায়ের করেন।
শুভ্রা মাহমুদা বলেন, “সেসময় প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে অনিকসহ তার সহযোগীদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মারধরের ঘটনা অনেকেই অবিশ্বাস করতে শুরু করে। উল্টো আমাকেই ‘খারাপ মেয়ে’ প্রমাণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে চলতি মাসের প্রথম দিকে অনিকের বহিষ্কারাদেশও তুলে নেওয়া হয়।” শুভ্রা বলেন, ‘আমি গতকাল (বৃহস্পতিবার) হঠাৎ সেদিনের মারধরের ঘটনাটির একটি ভিডিও হাতে পাই। যারা মারধরের ঘটনাটা অবিশ্বাস করেছে তাদের প্রমাণের জন্য আর পুলিশও যেন ঘটনার সত্যতা পায় সেজন্য ফেসবুকে আপলোড করেছি।’
শুভ্রা জানান, সরকারি বাঙলা কলেজের সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে অনিক। সে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অত্যাচার ও জিম্মি করে রাখতে চাইতো। স্থানীয় ওয়াসা, ড্যাব, ডেলটা, কলেজের সামনের চায়ের দোকান থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করতো। ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গেও যুক্ত ছিল সে। এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার ওপর অনিক ক্ষিপ্ত হয় বলে জানান শুভ্রা।
শুভ্রা বলেন, ‘২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনিক তার ছেলেদের দিয়ে আমায় ইভটিজিং করায় একবার। ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে হাতে কোপ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। মামলা করলেও কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। চাপে পড়ে আপস করেছিলাম। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটিতে আমাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট বানায়। কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার। সেই ঘটনার জের ধরে ২৪ অক্টোবর বাসায় এসে আমাকে ও আমার এক রুমমেটকে মারধর করে।’
এদিকে শুভ্রার এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ করা হলে মুজিবর রহমান অনিক ঘটনার দিন শুভ্রার বাসায় উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও মারধরের কথা অস্বীকার করে। ভিডিওতে তাকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে বলা হলে সে নিশ্চুপ ছিল। অনিক বলে, ‘মেয়েটা ভালো না। সে বাংলা কলেজের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫টা মামলা করেছে। মামলা করে সে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। এটা তার ব্যবসা।’
কোনও অপরাধ করলেও আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে কি না জানতে চাইলে অনিক বলে, ‘সেসময় সেখানে অনেকেই ছিল। আমি বাসার নিচে ছিলাম। পরে উপরে গিয়েছি। ওখানে পুলিশও ছিল। মেয়েটা আসলে আগে থেকেই খারাপ। শাহবাগ থানায় একবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছিল।’
এদিকে এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘ওই মামলার তদন্ত চলছে। মারধরের কোনও ভিডিও বাদীর কাছে যদি থাকে তাহলে আমরা তা সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’
https://www.facebook.com/BanglaTribuneOnline/videos/1000444610124272/