ফিচার

ঐক্য-অনৈক্যে নির্ভর করছে দুই সিটি নির্বাচনে আ.লীগের জয়-পরাজয়

By Daily Satkhira

May 05, 2018

অনলাইন ডেস্ক: গাজীপুর ও খুলনা— এই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সম্ভাব্য জয় ও পরাজয় দুটোই নির্ভর করছে স্থানীয় ঐক্য-অনৈক্যের ওপর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিরোধ-বিভেদ ভুলে স্থানীয় নেতারা এক হলে যেমন জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব, আবার বিরোধ-বিভেদ জিইয়ে থাকলে পরাজয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বলছেন, দুই সিটিতেই জয় যেমন নির্ভর করছে ঐক্যের ওপর, তেমনি পরাজয়ও নির্ভর করছে অনৈক্যের ওপর।

জানা গেছে, আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য এই দুই সিটির নির্বাচনের প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতারা শামিল হওয়ার চেয়ে স্থানীয় নেতাদের ঐক্য নিশ্চিত করতে এবং অনৈক্য দূর করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনিতেই জাতীয় নির্বাচনের বছরে দুই সিটির নির্বাচন ভীষণ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে। এর ওপর স্থানীয় ঐক্য-অনৈক্যের হিসাব-নিকাশ সেই দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ করেছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড.আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্থানীয় ছোটখাটো কিছু সমস্যা নির্বাচন এলে সামনে চলে আসে, আওয়ামী লীগ এগুলো মীমাংসা করে চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে অন্তরায়গুলো কী আছে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে, আবার সমাধানও করা হচ্ছে।’ প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়া কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ঐক্যের বিষয়টি এখনও মীমাংসা হয়নি। বাইরে ঐক্যের আওয়াজ থাকলেও ভেতরে অনৈক্য রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই অনৈক্য ভরাডুবির অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। দুই সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা দাবী করেন, তারা নির্বাচনি প্রচারণার চেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় অনৈক্যগুলো দূর করে নেতাদের একসঙ্গে প্রচরণায় নামাতে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি সফল হয়েছেন তারা, তা বলা যাবে না। তবে স্থানীয় নেতাদের যাকে যেভাবে আয়ত্তে আনা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সে ক্ষেত্রে সফল হলে নির্বাচনে বিজয়ও নিশ্চিত হবে। জিতলে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হবে, হারলে নেতাকর্মীদের মনোবলে বড় ধরনের চিড় ধরবে। আবার যেনতেনভাবে জিতে আসলে সরকারের সমালোচনায় মেতে উঠবে বিভিন্ন মহল। এসব বিষয় দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগে। জানা গেছে, দলের একটি মহল যেনতেনভাবে জিতে আসার পক্ষে অবস্থান নিলেও শীর্ষ পর্যায়সহ বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা এর বিপক্ষে। তাতে করে সরকারের কাঁধে দোষ পড়বে। স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনও দোষ সরকারের কাঁধে নেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করছেন প্রভাবশালী নেতারা। জাতীয় নির্বাচন সামনে, ফলে এই দোষ হীতে বিপরীত হয়ে দেখা দেবে। অপর পক্ষও আগামী নির্বাচনকে উপলক্ষ টেনে দাবি করছে, দুই সিটিতে হেরে গেলে নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরবে, তারা ঘরে ঢুকে যাবে, ঘর থেকে তাদের বের করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। ফলে নির্বাচনে জেতা জরুরি। নীতি-নির্ধারকেরা বলছেন, সম্ভাব্য জয়-পরাজয় নিয়ে দলের মধ্যে দুই ধরনের আলোচনা চললেও দুই সিটি নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অবস্থান হলো হেরে গিয়ে জেতা যাবে না। আবার জিতেও কোনোভাবেই হেরে যাওয়া যাবে না। অর্থাৎ সরকারের কাঁধে দোষ চাপিয়ে এমন কোনও বিজয় ঘরে নিয়ে আসতে চায় না আওয়ামী লীগ। সমালোচনামুক্ত বিজয়ই হলো দলের একমাত্র কৌশল। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, দুই সিটিতে দলের ঐক্যই জয়ের অন্যতম নিয়ামক। ফলে ঐক্য অটুট রাখা গেলে, দ্বিধা-বিভক্তি দূর করা সম্ভব হলে বিজয় দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। আর অনৈক্য থাকলে পরাজয়ের সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যাবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘দুই সিটিতেই আমরা জয়লাভ করবো।’ তিনি বলেন, ‘তবে স্থানীয় নির্বাচনে জয়-পরাজয় জাতীয় নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে না। দুই সিটিতেই এখন আর কোনও বিরোধ-বিভেদ নেই। ফলে জেতার ব্যাপারটি অনেকখানি নিশ্চিত।’