মোঃ রাসেল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি: কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নিয়ে কম কথা হয়নি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বেনাপোলে প্রতিটি স্কুল ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলে চলছে কোচিং বানিজ্য। সকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে আর সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। খেলা ধুলা থেকে ও হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভবক বলেন,শিক্ষার উন্নতির জন্য পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতেই হবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্যও চালু রয়েছে কোচিং ব্যবস্থা। পাস করার আগেই পরীক্ষার্থীরা লাইন দিচ্ছে সেসব কোচিং সেন্টারে । দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারের নিকট দাবি জানানো হচ্ছিলো। কিন্তু কাজ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের বাইরে কোচিংয়ে ক্লাস করিয়ে বাড়তি টাকা পান বলে স্কুলগুলোতে ঠিকমতো ক্লাস নেন না। তাই শিক্ষকদের কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করা জরুরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা অত্যাবশ্যক।
সত্যি বলতে কি শিক্ষাঙ্গনে কোচিং ব্যবস্থা এক মারাত্মক ব্যাধির রূপ নিয়েছে। তার বিস্তার ঘটেছে বিপুলভাবে। অধিক উপার্জনের জন্য একশ্রেণির শিক্ষক কোচিংয়ে তার শক্তি ও সময় ব্যয় করছেন। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে শ্রেনীকক্ষের শিক্ষাদান। আবার এর অন্য একটি অনৈতিক দিকও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকারও একধরনের চাপ অনুভব করেন শ্রেনীকক্ষের শিক্ষকের কাছে কোচিং পড়াতে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা অনৈতিক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতামূলক সমাজে সাধারণভাবে পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের আশায় শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছে। শ্রেনীকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান করা গেলে, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একজন শিক্ষার্থীর কোচিংয়ে পড়ার দরকার হতো না। শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি বাস্তবসম্মত অনুপাত রক্ষা করাও জরুরি।
সুতরাং শিক্ষার উন্নতির জন্য পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতেই হবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্যও চালু রয়েছে কোচিং ব্যবস্থা। পাস করার আগেই পরীক্ষার্থীরা লাইন দিচ্ছে সেসব কোচিং সেন্টারে।
শিক্ষাকে কিছুসংখ্যক লোকের অনৈতিক বাণিজ্যের ধারা থেকে বের করে আনতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্ণ প্রস্তুতি ও মনোযোগ দিতে। বিশ্বের কোথাও মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ ধরনের কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির রমরমা ব্যবসা নেই। বর্তমান বাস্তবতায় কোচিং ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দানের পাশাপাশি দক্ষ, মেধাবী ও সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষকতার পেশায় আকৃষ্ট করতে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও সুযোগসুবিধা বুৃদ্ধির বিষয়ে বাস্তববসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সরোজমিনে বেনাপোল সানরাইজ পাবলিক স্কুল, নবদিগন্ত কিন্ডারগর্টেন, বন্দর স্কুল, আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন, বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মডার্ন পাবলিক স্কুল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ছুটির পর ১ ঘন্টা তাদের টিফিন দিয়ে শিক্ষকরা আলাদা কোচিং করছে। যাদের বাড়ি দুরে তাদের বাড়ি থেকে অভিভাবকরা খাবার নিয়ে আসছে। আর যাদের বাড়ি নিকটে তারা গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসছে।
সানরাইজ পাবলিক স্কুলের অভিভাবক জি এম আশরাফ বলেন, শিক্ষার্থীদের এক ঘেয়েমি লেখা পড়ায় স্কুলে দিন কেটে যাচ্ছে। খেলা ধুলার কোন পরিবেশ পাচ্ছে না। সন্ধ্যার সময় বাড়ি যেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু উপায় নাই সব ছেলে মেয়েরা কোচিং করে । বাধ্য হয়ে মেয়েকে কোচিং করাতে হচ্ছে। আর এর জন্য শিক্ষকরা বাড়তি টাকা নিচ্ছে।