যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউন্ট কিলাউয়া আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে লাভা উদগিরণ শুরু হওয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। লাভার কারণে অন্তত তিনটি সড়কে ফাটল ধরেছে বলে জানিয়েছে দ্বীপপুঞ্জের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি, বেশ কয়েকটি বাড়িও ধ্বংস হয়ে গেছে।
মাউন্ট কিলাউয়া যেখানে অবস্থিত, হাওয়াইয়ের সে ‘বিগ আইল্যান্ডে’ প্রায় এক হাজার ৭০০ মানুষের বাস। তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, উদগীরনের মাত্রা ধীরে ধীরে তীব্রতর হচ্ছে। মাটি থেকে ১০০ ফুট উপরেও জ্বালামুখ থেকে ছুড়ে দেওয়া লাভার ঝর্ণা দেখা যাচ্ছে।
উদগীরণের কারণে বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইডের পরিমাণ এমন বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে বলে সতর্ক করেছে সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি। কেউ সেখানে অবস্থান করলে এবং বাতাসের কারণে আক্রান্ত হলে জরুরি বিভাগের কর্মীরা তাকে সহায়তা দিতে পারবে না বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিলাউয়াতে উদগীরণ শুরু হওয়ার এক দিনের মাথায় আগ্নেয়গিরিটির দক্ষিণ-পূর্ব অংশে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটিসহ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে ইউএসজিএস।
নতুন করে পাহাড়টির পূর্ব দিককার নিচের অংশ থেকে ‘তুমুল লাভা উদগীরণ’ ঘটছে বলেও জানিয়েছে তারা। উদগীরণের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছে মার্কিন এ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী একজন বিবিসিকে সালফার এবং গাছগাছালি পোড়ার গন্ধ পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে আমেরিকান রেড ক্রসের একটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে আসাদের জন্য খোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার।
উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য এরই মধ্যে হাওয়াই ন্যাশনাল গার্ড কাজ শুরু করেছে বলে জানান গভর্নর ডেভিড আইজিই।
গত সপ্তাহের শুরু থেকেই হাওয়াই কর্তৃপক্ষ আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুৎপাতের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিল। “আমার পরিবারের সবাই নিরাপদে আছে। এর বাইরে যেসব জিনিস ছিল, তা বদলে নেওয়া যাবে। ১৪ বছর আগে যখন আমি এখানে এসেছিলাম, তখন জানতাম এমন একদিন আসবেই। যদিও বাস্তবতা এখন আমাকে ভাসিয়ে দিয়েছে,” হাওয়াই নিউজ নাও’কে এমনটাই বলেন দ্বীপটির এক বাসিন্দা।
লাভার উদগীরণের সময় আধা মাইর দূর থেকেও বিকট আকারের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় বলে জানান বিগ আইল্যান্ডের আরেক বাসিন্দা মাইজা স্টেনবেক।
“আপনি এর শক্তি অনুভব করতে পারবেন। লাভার রং ছিল অবিশ্বাস্য, শব্দও। জোরে বিস্ফোরণের মত শব্দ হয়। আগ্নেয়গিরিটি তার যত শক্তি আছে, তা দিয়ে লাভা ছুড়ে দেয়। এটা আপনি শুনে বুঝতে পারবেন না, এটা অনুভবের বিষয়,” বলেন তিনি।
অগ্ন্যুৎপাতের পর দ্বীপটির অন্তত দুটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে এবিসিকে জানিয়েছেন হাওয়াইয়ের মেয়র হ্যারি কিম।
চলতি বছরের শুরুতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভুল সতর্ক বার্তাও হাওয়াইয়ের অধিবাসীদের আতঙ্কিত করেছিল।