জাতীয়

দুই মেয়েকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা, বেড়েই চলেছে ‘রহস্য’

By Daily Satkhira

May 05, 2018

সোমবার (৩০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকার পাইকপাড়া সি টাইপ সরকারি কোয়ার্টারের ১৩৪ নম্বর ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী হিসাবরক্ষক জেসমিন আক্তার ও তার দুই মেয়ের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও মা ও দুই মেয়ের মৃত্যুর ‘ক্লু’ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। যার ফলে এই মৃত্যুকে ঘিরে বেড়েই চলেছে ‘রহস্য’।

মৃত্যুর ঘটনার পর জেসমিনের কর্মস্থলে তার টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে একটি চিরকুটে লেখা সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। চিরকুটটিতে লেখা ছিল- ‘আমি বেঁচে থাকার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সব দিক থেকে অনেক অন্ধকার নেমে এসেছে। তাই এ সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আমার মৃত্যুর জন্য নির্মম দুর্ভাগ্য দায়ী।’

চিরকুটটি উদ্ধারের পর দুই শিশুসন্তানসহ মায়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য আরও বেড়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগে দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেসমিনের অফিসে তার ড্রয়ার থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। তার লেখা ওই চিরকুটের অর্থ খোঁজার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, এটি জেসমিনের লেখা কিনা সেটি নিশ্চিত হতে তা পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। তবে পুলিশ বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বলে জানিয়েছেন দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঘটনার কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা এখনো নিশ্চিত না হওয়ায় কাউকে আটক করা হয়নি।

ওসি সেলিমুজ্জামান বলেন, মৃতদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটি হাতে পেলেই জানা যাবে এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা। তবে সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

ঘটনার দিন ওই বাসায় ছিলেন মৃত জেসমিন আক্তারের খালাতো বোন রেহেনা পারভীন যুথি, ভাগিনা রওশন জামিল ও তার স্ত্রী রোমানা পারভীন।

মৃত জেসমিনের স্বজনরা দাবি করেছেন নিজের চাকরি ও সংসার নিয়ে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত থাকার কারণেই জেসমিন আক্তার (৩৫) নিজের দুই মেয়েকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন।

এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান বলেন, মা ও দুই মেয়ের লাশ যখন উদ্ধার করা হয় তখন জেসমিনের বডির পাশে হলুদ রঙের কাঠের বাঁটযুক্ত একটি রক্ত মাখা ছুরি পড়েছিল। আমরা যখন জেসমিনের স্বামীর কাছে জানতে চেয়েছি ছুরিটি বাসায় ব্যবহৃত কিনা তিনি তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় জেসমিনের পরিবারের অনেকেই বাসায় ছিলেন। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনা তারা আঁচ করতে না পারায় রীতিমত রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তাই জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের ওপর নজরদারি অব্যাহত আছে।

মৃতদের ময়নাতদন্ত শেষে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা বলেছেন, মৃত মা ও দুই মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের মারাত্মক জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। যা দেখে মনে হয়েছে ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে।