অনলাইন ডেস্ক: আর দু’সপ্তাহও বাকি নেই, এর আগেই শুরু হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ও সংযমের মাস বলে পরিচিত রমজান মাস। ইতোপূর্বে এই মাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। তাই এবার রমজান মাস শুরুর আগেই বাজার মনিটরিং করতে মাঠে নামবে দেশের চারটি সংস্থার গোয়েন্দারা। নিত্য পণ্যের অবৈধ মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি মনিটর করবে তারা। এ বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, বাজার মনিটরের জন্য মাঠে নামানো টিমে দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ছাড়াও র্যাব, পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকছেন। অবৈধ মজুদের সন্ধান পেলে মজুদকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘প্রতিবছরই বাজার পরিস্থিতি জানতে ও তদারকিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করে। এ বছরও করবে। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এই টিম বাজারে নামবে। কোথাও কোনও সমস্যা দেখলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে।এরপর ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’ জানা যায়, ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর বলে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সরকার। যে কোনও অযুহাতে নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির না হয় সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। এ কারণেই সরকারের এই আগাম ব্যবস্থা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন রমজান ও বৃষ্টিকে পুঁজি করে ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজ উল্লেখযোগ্য। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও বৃষ্টির কারণে নিত্যপণ্যেও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। তবে এখন পর্যন্ত পণ্যের সরবরাহে কোনও প্রকার সমস্যা নাই। বৃষ্টির সমস্যা সাময়িক।’ এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চাহিদার তুলনায় দেশে সকল প্রকার পণ্যের মজুদ সন্তোষজনক। দেশে কোনও পণ্যের ঘাটতি নাই। সব ধরণের পণ্যের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কয়েকগুন বেশি। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এক আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই বৈঠকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরাও উপস্থিত ছিলেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘শুধু রমজানে নয়, সারা বছরই দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, দাম বাড়বে না। গত রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা অঙ্গীকার করেছিলেন- নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না, তারা সেই কথা রেখেছেন।’ এবারও তারা সেই ব্যবস্থাই নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মজুদ পরিস্থিতি দেখতে বাজারে নামছে দেশের ৪টি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একাধিক টিম। পণ্যের মজুদ, চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি মনিটরিং করবে এসব টিম। এসময় তারা পণ্যের দাম ও মান যাচাই করবেন। ভাউচারের সঙ্গে কোনও ধরণের অসঙ্গতি দেখলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবে ওই টিম। এজন্য ব্যবসায়ীদের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিশেষ বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালাবে মন্ত্রণালয়। এজন্য এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২-৩টি প্রস্তুতিমূলক বৈঠকও করা হয়েছে। চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বাজার মনিটরিং ছাড়াও ব্যবসায়ীদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেবেন এবং কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০০৭ সাল থেকে ঢাকা শহরের বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম রয়েছে। একজন উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে এ টিম গঠিত। তারা নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকেন। বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা, পণ্যের অস্বাভাবিক মজুদ ঠেকানোসহ সরবরাহ ঠিক রাখতে এই ১৪টি মনিটরিং টিমকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশিন ও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকেন। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত এই ১৪টি মনিটরিং টিম সারা বছর কাজ করলেও রোজার সময় তাদের কাজের গতিকে আরও জোরদার করা হয়। বাজার বিশ্লেষকদের দাবি- আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণে প্রশাসনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে, নিত্যপণ্যের দর তদারকিতে টিসিবিকে ( ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) আরও সক্রিয় করতে পারলে আসন্ন রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য অনেক সহজ হবে। এদিকে রমজানের এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে বাজারে নামছে টিসিবি। এবছর টিসিবি রাজধানীসহ সারা দেশে ছোলা ৭০ টাকা কেজি দরে, প্রতি কেজি মসুর ডাল (মাঝারি সাইজের) ৫৫ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা, প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা এবং ভোজ্যতেল ৮৫ টাকা লিটার দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিসিবির এ কার্যক্রম চলবে বলে টিসিবির চেয়ারম্যানের দফতর থেকে জানানো হয়েছে।