মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বৈষম্য, নিপীড়ন এবং পরিকল্পিত নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে ওআইসির সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্সিলের (সিএফএম) সম্মানে দেওয়া ভোজসভায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনস্রোতের ভয়ানক চাপের মুখোমুখি। প্রতিবেশী মিয়ানমারে যা ঘটেছে সেটি কেবল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিরই লঙ্ঘন নয় বরং এটি জাতিগত নিধনের জলন্ত দৃষ্টান্ত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ, ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসেফ এ আল-ওথাইমিন এবং সহকারী মহাসচিব এই রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় যোগ দেন।
‘সংঘাত ও ইসলামফোবিয়ায় আমাদের বিশ্ব চ্যালেঞ্জের মুখে। যাতে মুসলমানরা ইসলাম ফোবিয়া অথবা জাতিগত নিধনের শিকার না হয় সে বিষয় ওআইসিকে একটি স্থিতিশীল বিশ্বের জন্য লক্ষ্য স্থির করা প্রয়োজন’ এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এক্ষেত্রে সংহতির পরিবর্তে ওআইসি সদস্যদের জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।’
কয়েক দশক ধরে জাতিগত নিধনের বিবরণ তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইনের অধীনে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করা হয়েছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ হরণ করা হয়েছে। তারা তাদের নিজ দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতির অধিকার থেকে বঞ্চিত।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালিত দীর্ঘদিনের নিপীড়ন সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো হয়।’
রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গাদের জন্য এবং একইসঙ্গে ফিলিস্তিনীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্টায় ওআইসির অব্যাহত ভূমিকার প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রপতি ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন খাত আরো সুসংহত করতে জরুরি ভিত্তিতে অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, বর্তমান এই অবস্থায় বিশ্বের ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মুসলিমের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সংস্থাকে সামনের দিকে এগোতে হবে এবং কার্যকারিতা জোরদার করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মুসলিম বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে ২০০৫ সালে গৃহীত লক্ষ্য ‘সলিডারিটি ইন অ্যাকশন’ নতুন করে জোরদার করা প্রয়োজন।
ওআইসির ৫৬টি সদস্য এবং অন্য ৫টি দেশের মধ্যে ৫২টি দেশের ৬শ’র বেশি প্রতিনিধি এবং ৪০ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ দুই দিনব্যাপী (৫ ও ৬ মে) এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নে ইসলামিক মূল্যবোধ।’
ভোজসভার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।