ঘি আর মাখন এই দুটোই গরুর দুধ থেকে তৈরি হয়। সাদা চিকন চালের গরম ভাত। ভুর ভুর করে গন্ধ ওঠা ঘি। সঙ্গে আলুসিদ্ধ বা কিংবা মাছ ভাজা। গরম গরম মাখন ভাত ইত্যাদি। রান্না ও ভোজনের ক্ষেত্রে একটির বিকল্প হিসেবে আরেকটিকে ব্যবহার করা যায়। তাই বাড়িতে ঘি না থাকলে অনেকে আবার কাজ সারেন মাখনেই।
তবে ঘিয়ে ডেইরি প্রোটিনের মাত্রা তুলনামূলক কম। এ কারণে খাবার হিসেবে মাখনের চেয়ে ঘি বেশি স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন অনেকে। এ নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক অনলাইন বুলেটিন মেডিকেল নিউজ টুডের এক পর্যালোচনায় উঠে আসে, যাদের দেহে ডেইরি পণ্য সহনশীলতা কম, শুধু তাদের ক্ষেত্রে মাখনের তুলনায় ঘি স্বাস্থ্যকর বেশি।
মূলত ঘি হচ্ছে পরিশোধিত মাখন। নিয়মিত আগুনে জ্বাল দিয়ে দিয়ে মাখনের তরল চর্বি ও দুধের কঠিন অংশ আলাদা করে ফেলা হয়। এ কারণে মাখনের তুলনায় ঘিয়ে ল্যাকটোজের পরিমাণ অনেক কম। ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও ঘি’র ব্যবহার রয়েছে।
গরুর দুধ থেকে উৎপন্ন এই ঘি ও মাখনের পুষ্টি প্রোফাইল ও চর্বি উপাদান প্রায় এক। তবে এতে ডেইরি প্রোটিনের পরিমাণ অনেক কম। ঘির প্রায় ৫০ শতাংশই স্যাচুরেটেড ফ্যাট হওয়ায় এর প্রভাবে ২০১০ সালের এক প্রতিবেদনে ভারতবর্ষে উচ্চরক্তচাপজনিত হৃদরোগের (সিএডি) মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু চলতি বছরের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেহে চর্বি ও কোলেস্টেরলের উৎস হিসেবে সরিষার তেলের তুলনায় ঘি কম বিপজ্জনক।
এছাড়া উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের ডেইরি প্রোটিন অপসারিত হয় বলে এতে ক্যাসিন (দুগ্ধজাত ফসফোপ্রোটিন) ও ল্যাকটোজের মাত্রা অনেক কম। এ কারণে যাদের দেহে ক্যাসিন বা ল্যাকটোজ সহনশীলতা অনেক কম, তাদের জন্য মাখনের তুলনায় ঘি ব্যবহার করাই উত্তম। এছাড়াও এতে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড (সিএলএ) নামে এক ধরনের উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেশি, যা হৃদরোগের আশঙ্কা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি ঘিয়ে বিউটিরেট অ্যাসিড নামে এক ধরনের উপাদান পাওয়া যায়, যা হজমে সহায়ক ও প্রদাহনাশক উপাদান হিসেবে পরিচিত।
তাই তুলনা করলে দেখা যায়, মাখনের থেকে সামান্য বেশি হলেও ঘিয়ের উপকারিতা বেশি। এবং ঘি বেশি স্বাস্থ্যকর।
তবে এটাও ঠিক যে পরিমিত মাত্রায় তা গ্রহণ করা না হলে মাখন হয়ে উঠতে পারে হৃদরোগ ও রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের অন্যতম কারণ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মতে, পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা হলে ঘি ও মাখনের মধ্যে কোনোটিই খুব একটা বিপজ্জনক নয় বলে মনে করছেন তারা।