দেশে ইদানীং ফেসবুকে যোগাযোগের মাধ্যমে গড়ে উঠছে শুধুমাত্র মেয়েদের ভ্রমণের দল।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের এক হিসেবে এমন ২৭ টি দলের খোঁজ পাওয়া গেছে,যার সদস্য শুধু মেয়েরা।
তারা একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছেন ফেসবুকে এবং একসাথে মিলে দেশের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে বেড়াতে যাচ্ছেন। নিজেরাই আয়োজন করছেন সবকিছু।
এরকম একটি দলের নাম ট্রাভেলেটস অফ বাংলাদেশ ভ্রমণ কন্যা। দুই শিক্ষানবিশ চিকিৎসক বান্ধবীর উদ্যোগ।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুত্ব হয়েছে আরো অনেকের সাথে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৮টি পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণের আয়োজন করেছেন তারা।
কী কারণে তারা এমন দল তৈরি করছেন?
এই ভ্রমণ কন্যাদের একজন সাকিয়া হক। তিনি বলেন, “আমি আর আমার বান্ধবী মানসী এ গ্রুপটা খুলি এ কারণে যে আমরা চাচ্ছিলাম মেয়েরা যাতে ভ্রমণে উদ্বুদ্ধ হয়।”
সাকিয়া ও কয়েক বান্ধবী মিলে স্কুটিতে চড়ে বাংলাদেশের ২০ টি জেলা ঘুরেছেন। ফেসবুকে ভ্রমণ কন্যার সদস্য সংখ্যা এখন ১৮ হাজার।
শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয়ের ভিত্তিতে এমন আরো অনেক দল গড়ে উঠেছে। যেমন ফিমেল ট্র্যাভেলারস অফ বাংলাদেশ, ওয়ান্ডার উইমেন এমন তাদের নাম। যেগুলো প্রথাগত প্যাকেজ টুর নয়, যার কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যও নেই। এগুলো মূলত ফেসবুকে সদস্য-ভিত্তিক ক্লোজড গ্রুপ। শুধু বান্ধবীরা মিলেও বেড়াতে যাচ্ছেন এমন দলও তৈরি হয়েছে। ফারহানা আলম তাদের একজন। তিনি বলছেন, শুধু মেয়েরা যাতে একত্রিত হয়ে নিজেদের সময় কাটাতে পারে সেজন্যই এ আয়োজন। “যদি হাজবেন্ড বা বয় ফ্রেন্ডদের কথা বলি, তখন ব্যাপারটা হয় যে তাদের জন্য সময় দিতে হয়। কিন্তু আমরা শুধু আমাদের জন্যই বেড়াবো। আমাদের যেটা মনে হবে, আমরা সেটাই করবো,” বলছিলেন ফারহানা আলম। এসব গ্রুপের সদস্য মূলত তরুণ প্রজন্মের মেয়েরা। তাদের কেউ পড়াশোনা করছেন। কেউবা হয়ত তরুণ প্রফেশনাল, বেসরকারি কোন সংস্থায় কাজ করেন। কিন্তু রক্ষণশীল বাংলাদেশে পরিবার থেকে এমন মেয়েরা কতটা উৎসাহ পান? জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ভ্রমণ পিপাসু আরেকজন তামান্না খায়েরের কাছে। তিনি বলেন, দলবদ্ধ হয়ে মেয়েদের সাথে ঘুরতে যাবার ক্ষেত্রে পরিবার থেকে অনেক উৎসাহ পেয়েছেন। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমন নাও হতে পারে। তবুও ফেসবুক গ্রুপের পাশাপাশি গড়ে উঠছে ট্যুর কোম্পানি যারা মেয়েদের জন্য আলাদা করে প্যাকেজ তৈরি করছেন বা ভ্রমণের সহায়তা দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডও যোগ দিয়েছে মেয়ে পর্যটকদের জন্য ক্যাম্পেইনে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের জন্য ওয়ার্কশপ, প্রবন্ধ বা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা এমন অনেক কিছুই আয়োজন হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাথে উইমেন ট্র্যাভেলারস ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে ট্রিপযিপ ট্যুরস। এর নির্বাহী পরিচালক কানিজ ফাতেমা। তিনি বলেন, যারা ঘুরতে যাচ্ছে তাদের কেউ কাউকে চেনে না । পর্যটনের ক্ষেত্রে এটা বড় ধরনের পরিবর্তন বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু এমন আয়োজনে প্রশ্ন ওঠে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে। সেটির ব্যাপারে তারা কী করছেন? কানিজ ফাতেমা বলেন, এসব ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং টুরিস্ট পুলিশের সহায়তা নেন।