মহাকাশে পাড়ি দেয়ার পরপর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন। এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট) স্থাপনের কাজ চলেছে এখন। তবে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন লাগবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। আরও অন্তত সাত দিন পর সিগন্যাল পাবে বাংলাদেশে অবস্থিত দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন।
শনিবার (১৩ মে) বেলা ১২টার দিকে বেতবুনিয়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনের একাধিক কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম বেতবুনিয়া ও গাজীপুর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সিগন্যাল পেয়েছে এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে। তবে বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশনের একাধিক কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী বিষটিকে ‘একবারে ডাহা মিথ্যে’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তারা বলেন, ‘৭ দিনের আগে কোনো সিগনাল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি ট্যাকনিকাল বিষয়, এ নিয়ে যেনতেন কথা না বলাই ভাল।’
এর আগে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে মহাকাশপানে উড়াল দেয় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে রওনা হয় নিজস্ব কক্ষপথে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স সফল উৎক্ষেপণের খবর দিয়ে টুইটে জানিয়েছে, স্যাটেলাইটের প্রথম ধাপের পাশাপাশি দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ফ্যালকন-৯ রকেট ভূপৃষ্ঠে ফিরে এসেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ৪৭ মিনিটে সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছেছে বঙ্গবন্ধু-১।
রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এটি মূলত ব্যাকআপ স্টেশন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে পাড়ি দেয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম এর নিয়ন্ত্রণ নেবে এই গ্রাউন্ড স্টেশন। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে।
মূলত বেতবুনিয়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন-২ এর ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগাতেই এমনটা করা হবে। এরপর স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণের মূল কাজ হবে জয়দেবপুরে স্টেশনেই। তবে কখনও যদি গাজীপুর স্টেশন স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তখন বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন-২ কাজ শুরু করবে। অনেক ক্ষেত্রে দুই গ্রাউন্ড স্টেশনেই সমানতালে কাজ হবে।
স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের ওয়েব সাইট সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, উপগ্রহটিকে পর্যায়ক্রমে বেতবুনিয়া ও ও গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এসব পরীক্ষার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে জমির ঘনত্বের সংযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন হবে।
বেতবুনিয়ায় অবস্থিত গ্রাউন্ড স্টেশনের প্রকৌশলীরা জানান, উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। এ জন্য ৭ থেকে ১০ দিন লাগবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপরই এর নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন। একই সঙ্গে ৭ দিন পর থেকে বাংলাদেশের পক্ষে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নিতে অপেক্ষা করবে বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন। এর মাঝেই চলতে থাকবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগবে।
সূত্র জানায়, ফ্যালকন-৯ রকেটে চারটি অংশ রয়েছে। উপরের অংশে ছিল স্যাটেলাইট, তারপর অ্যাডাপটর। এরপর স্টেজ-২ এবং সবচেয়ে নিচে ছিল স্টেজ-১। দুটি ধাপে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া শেষ হয়। লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি) এবং স্যাটেলাইট ইন অরবিট। এলইওপি ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন লাগবে।