আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, নিহত ১০

By Daily Satkhira

May 14, 2018

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ জন। আহত প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। সোমবার সকাল ৭টায় রাজ্যটির বিশটি জেলায় ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হয়, শেষ হবে বিকাল ৫টায়। কিন্তু ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই একের পর সহিংসতার খবর আসতে থাকে। ছাপ্পা ভোট, বুথ দখল, ভোটারদের ভোট দানে বাধা দেওয়া, বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়া, বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের মেরে রক্তাক্ত করে দেওয়াসহ বহু অভিযোগ উঠেছে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এমনকি তৃণমূলের ছোঁড়া বোমা হামলায় এক সিপিআইএম কর্মীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

এবারের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের ২০টি জেলা পরিষদের ৬২১টি আসনে, ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৫৭ আসনে এবং ৩৩৫৮ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১৮২৭টি আসনে একযোগে ভোট নেওয়া শুরু হয়। ভোটগ্রহণ পর্বকে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করতে রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রায় ৭২ হাজার পুলিশকে মোতায়েন করলেও সহিংসতা এড়ানো যায়নি।

উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার আমডাঙ্গায় পাঁচপোতায় বোমা হামলায় এক সিপিআইএম কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। বোমার হামলায় আরও দুই সিপিআইএম কর্মী আহত হয়। এদিন তৈবুর গায়েনসহ ওই বাম সমর্থকরা ভোট দিতে যাওয়ার সময় তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। কিন্তু তারা সেই বাধা এগিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকলে তাদের ওপর তৃণমূল কর্মীদের পক্ষ থেকে বোমা ছোঁড়া হয় বলে তারা অভিযোগ করেছেন। হামলায় তৈবুরের মাথায় বোমার আঘাত লাগে। অন্য একজনের হাতের সামান্য অংশ উড়ে যায়অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এরপরই তৈবুরকে কল্যানীর জওহর নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কুলতলির নয়াপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আরিফ আলি গাজি নামে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। অভিযোগ সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া (এসইউসিআই)’এর বিরুদ্ধে। যদিও এসইউসিআই’এর পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এদিকে, এই জেলারই কাকদ্বীপের নামখানা ব্লকের বুধাখালিতে সস্ত্রীক সিপিআইএম নেতাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ওঠেছে। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বুধাখালিতে সিপিআইএম নেতা দেবু দাসের ঘরে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ ঘটনালে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ঊষা দাস অগ্নিদদ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানায় সিপিআইএম। যদিও শর্ট সার্কিটেই ওই দম্পতির মৃত্যু হয়েছে দাবি তৃণমূলের।

নদীয়ার শান্তিপুরের বিবেকানন্দ নগরে তৃণমূলের হয়ে ভোট লুট করতে এসে সঞ্জিত প্রমাণিক নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এদিন সকালের দিকে বিবেকানন্দনগরের উত্তরপাড়া হাইস্কুলে একটি বুথে সঞ্জিতসহ কয়েকজন বহিরাগত যুবক ছাপ্পা ভোট দিতে এলে স্থানীয়রা তাদের ধরে ফেলে। এসময় তাদের মারধর করার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সঞ্জিত। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সঞ্জিতের মৃত্যু হয়, আহত আরও দুইজন। অন্যদিকে নদীয়া জেলার নাকাশিপাড়ার বিলকুমারীতে ভোলা দফাদার নামে এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়। ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় দুই পক্ষের বোমাবাজি ও গোলাগুলির মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয় ভোলার। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে আরো তিনজন হাসপাতালে ভর্তি।

মুর্শিদাবাদ জেলার সুজাপুরে বোমা হামলায় খুন হয় এক বিজেপি কর্মী। নিহত ওই বিজেপি কর্মীর নাম তপন মন্ডল। ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তার ওপর বোমা হামলা হয় বলে জানা গেছে। এই জেলার নওদার পাটিকাবাড়িতে একটি বুথের সামনে গুলিতে খুন হয়েছে স্বতর্থ দলের সমর্থক শাহিন শেখ। শাহিনকে বুকে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ সিপিআইএম সমর্থকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন অপু মান্না ও যোগেশ্বর ঘোষ। এদিন দুপুরের দিকে নন্দীগ্রামের ২ নম্বর ব্লকের হাঁসচড়াতে একটি বুথে যখন ওই দুই সিপিআইএম সমর্থক ভোটদানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ঠিক তখন তাদের ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই দুই ব্যক্তি তার প্রতিবাদ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন ওই দুই ব্যক্তি। ঘটনার পর লাশ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয়রা।

এছাড়াও উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়াসহ একাধিক জেলায় নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বোমাবাজি, ছুরি ও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ। এর পাশাপাশি কোথাও ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেওয়া, ব্যালট বাক্সে পানি ঢেলে দেওয়া, আবার কোথাও ব্যালট বাক্সকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার মতো অভিযোগ ওঠে। মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগরে ব্যালট বাক্স লুট করে সেই ব্যালট বাক্স খুলে দুর্বৃত্তরা ভোট গণনা শুরু করে দেয় বলে অভিযোগ। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা সহ অন্য ভোট কর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর চোখের সামনেই এই কাজ চলে।

কুচবিহারের নাটাবাড়িতে বিজেপি’এর এক এজেন্টকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ’এর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাসন্তী এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এসময় একজন সাব ইন্সপেক্টর আহত হন। মালদা’র রতুয়ায় ইঁটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন।

রাজ্য জুড়েই এই সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তাঁর অভিমত, ‘১৯৭২ সালের পর থেকে কোন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ধরনের সহিংসতার ঘটনা রাজ্যে ঘটেনি’।

এদিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাগদায় একটি বুথ দখলের ঘটনায় বিজেপি ও সিপিআইএম’র হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যটির খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অভিযোগ। আগামী ১৭ মে ভোট গণনা হবে।