সুমাইয়া স্নিগ্ধা নামের এক শিক্ষার্থী জানালেন তাঁর আশঙ্কার কথা। কেন্দ্র কতটা নিরাপদ, সেটার খোঁজখবর নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন তিনি। এই তরুণী বললেন, ভোট দিলে ব্যক্তিগত লাভ নেই। সামষ্টিক লাভ। ভোট দিতে গিয়ে ব্যক্তিগত কোনো ক্ষতি হলে সেটা হবে একান্তই ব্যক্তিগত। ক্ষতি হলে যার জন্য যাব, তিনিও খবর পর্যন্ত নেবেন না।
ইজিবাইকচালক মো. মুন্না জানালেন আটটার আগেই ভোট দিয়ে আসার ইচ্ছা আছে। তিনি বলেন, ‘গন্ডগোল হলে তো পরে হবে। তাই সবার আগেই ভোট দিয়ে চলে আসব।’
কেডিএ রোডে চায়ের দোকানে কথা হলো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা বললেন, ভোট ভালোভাবেই হবে। সরকারি দলের পক্ষ থেকে ভোটার বা অন্য কারও ওপর কোনো চাপ নেই। তবে বোঝা যাচ্ছে না ভোটের দিন সকালে কী হয়।
ভোটারদের আশঙ্কার মূলে রয়েছে নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি। প্রধান দুই প্রার্থীর অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে শুরু থেকে উত্তপ্ত ছিল মহানগরীর নির্বাচনী অঙ্গন। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ এসেছে গতকাল দুপুরে। সরকারি দল পাল্টা একই অভিযোগ করেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি আর গ্রেপ্তারের অভিযোগ ছিল নিয়মিত। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগও শুরু থেকে করে আসছে বিএনপি।
এরই মধ্যে সোমবার ভোটের আগের দিন শহরের অবস্থা ছিল অনেকটাই থমথমে। ভোট নিয়ে কথা বলতে অনেককেই সতর্কভাব নিতে দেখা গেছে। অবস্থা বুঝে মুখ খুলেছেন। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যেও পরিস্থিতি নিয়ে রয়েছে মিশ্র মূল্যায়ন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। কয়েক দিন আগে যে উৎকণ্ঠা ছিল তা অনেকটা কমেছে। ভোটের দিন সকালে মানুষের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ যতটা থাকবে, আস্তে আস্তে সেটা বাড়তে পারে। প্রথম দিকে মানুষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সম্পাদক কুদরত ই খুদা মনে করেন, ভোটের পরিবেশ নিয়ে বলেন, ভোটের পরিবেশ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত (আনপ্রেডিকটেবল) অবস্থায় চলে গেছে। আজই (সোমবার) দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একটা নির্বাচনের আগের দিন এ ধরনের কথাবার্তা সন্দেহ তৈরি করে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করার জন্য তাঁদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার। সাধারণ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে থাকবে ২২ জন করে। এর বাইরে পুলিশের ১১টি স্ট্রাইকিং দল (প্রতিটিতে ১০ জন করে), ৭০টি ভ্রাম্যমাণ দল (প্রতিটি ৭ জন করে), ১৬ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩২টি ভ্রাম্যমাণ দল, ৩১ জন নির্বাহী হাকিম এবং ১০ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, খুলনায় মোট ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ (কমিশনের ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ)। আর ৫৫টি সাধারণ বা ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্র আছে।
খুলনায় ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেক মেয়র নির্বাচিত হন।
সূত্র: প্রথমআলো।