ন্যাশনাল ডেস্ক: মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুশিয়ারি ও অভিযান পরিচালনার নির্দেশনার পর সারাদেশে কঠোর অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দেশজুড়ে চলছে সাড়াশি অভিযান। গত ৪ মে থেকে মাদক নির্মুলে র্যাবের অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭শ’ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। মাদকসহ ৪৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনাকালে র্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে ৩ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ গতকাল রাজশাহীর অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আবুল হাসান ওরফে হাসান ঘাটিয়াল র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। এসময় অস্ত্র, গুলি, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে র্যাব। বুধবার দিবাগত রাতে মহানগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। র্যাব-৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর এসএম আশরাফুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে মাদকের চালান আসছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে র্যাবের একটি অপারেশন দল নগরীর পশ্চিম নবগঙ্গা এলাকার পদ্মার ৫ নম্বর বাঁধ অভিযান চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা বস্তায় করে ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসছিল। মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায়। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি করে। ৮/১০ মিনিট গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলেও একজনকে ঘটনাস্থলে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ থেকে মো. রাজমহল রিকন ও কুষ্টিয়ায় হামিদুল ইসলাম নামক দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এই দুই ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি, ইয়াবাসহ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এদিকে গতকাল ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের তিন নম্বর রোডে র্যাব-১ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ও আব্দুল খালেক ওরফে পলাশকে ৫০ হাজার ১২০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে শহীদুল ইসলাম র্যাবকে জানায়, তিনি একজন কাপড় ব্যবসায়ী। ইসলামপুরে তার পাইকারী কাপড়ের দোকান রয়েছে। এছাড়া নিউমার্কেট গাউছিয়াও তার একটি দোকান আছে। তার এই ব্যবসার অন্তরালে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার ব্যবসা করে আসছিলেন। কাপড়ের ব্যবসার চেয়ে ইয়াবার ব্যবসায় তার লাভ ছিল বেশি। এর আগের রাত্রে র্যাব-২ তেজগাঁও’র নাবিস্কোর মোড়ে অভিযান চালিয়ে টেকনাফের মাদক ব্যবসায়ী মামুনকে ৪৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। মামুন র্যাবকে জানায়, সে প্রায় মাসেই টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় আসতো। গত ৩ মে রাজধানীতে র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে কোন আপোষ নয়। যেই জড়িত থাকুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপর থেকে ইয়াবাসহ মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় র্যাব। শুরু করে সারাদেশে সাড়াশি অভিযান। র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে সারাদেশে সাড়াড়ি অভিযান চলছে। মাদক নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহীতে ৩৫তম বিসিএস (পুলিশ) শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) এক বছর মেয়াদী শিক্ষা সমপানী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের করাল গ্রাসে আমাদের তরুণ সমাজ আজ বিপদাপন্ন। এই ভয়াল থাবা থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে হবে। মাদক সেবনকারী, ব্যবসায়ী, উত্পাদক, সরবরাহকারী সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান আগেও ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পুলিশ এখন কঠোর অবস্থানে থেকে সারাদেশে সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। মাদক নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, মাদক সেবনকারীদের মধ্যে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। তেজগাঁওয়ের মাদকসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সকল পেশার মানুষ ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। এরমধ্যে ১০ বছর থেকে তার ঊর্ধ্বের শিক্ষার্থীরা বেশি আসক্ত। বর্তমানে মাদকাক্তদের মধ্যে ইয়াবায় আসক্ত ৭০/৭৫ ভাগ। আর ইয়াবায় আসক্তদের মধ্যে ৬০/৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী। আসক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধাবিরা বেশি। তরুণ সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর সাড়াশি অভিযানের দাবি উঠেছিল সমাজের সর্ব মহল থেকে। কেউ কেউ দাবি করেন, মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষা পেতে হলে ক্রসফায়ার জরুরি। কারণ মাদক ব্যবসায় জড়িতদের কেউ আটকে রাখতে পারে না। গ্রেফতারের পর কোন না কোনভাবে তারা বের হয়ে আসে। তাদের হাত অনেক বড়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। অবশেষে শুরু হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযান। আর অভিভাবকসহ সব মহল এ সাড়াশি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে।