স্বাস্থ্য ডেস্ক: শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে পুষ্টিকর খাবার খুবই জরুরি। তাই ইফতারির মেন্যুতে রাখতে পারেন ‘মহৌষধ’ হিসেবে খ্যাত পুদিনা পাতা।
পৃথিবীতে এমন অনেক ধরনের উদ্ভিদ আছে যেগুলোতে প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। পুদিনা পাতা তার মধ্যে অন্যতম। সাধারণ আগাছা ধরনের এই গাছটির কাণ্ড ও পাতা বেশ নরম। ছোট গুল্ম জাতীয় এই গাছের পাতা ডিম্বাকার, পাতার কিনারা খাঁজকাটা ও সুগন্ধীযুক্ত হয়। পুদিনা পাতার মূল, পাতা, কান্ডসহ সমগ্র গাছই ওষুধিগুনে পরিপূর্ণ। আসুন জেনে নেই এর বিভিন্ন ধরণের ওষুধি গুণাগুণ সম্পর্কে।
১. পেট ফাঁপায়: সহজ কথায় পেটে বাতাস জমে যাওয়া। এ অবস্থা সৃষ্টি হলে নানা রোগ হতে পারে। বদ হজমের ফলে পেটে বাতাস জমে এবং পেট ফাঁপে। এ ক্ষেত্রে পুদিনার শরবত উপরিউক্ত পদ্ধতিতে সারাদিন ২-৩ বার করে কয়দিন খেলে পেটে বাতাস জমা বন্ধ হবে। খাদ্যে রুচিও ফিরে আসবে।
২. শিশুদের অতিসারে: পাতলা দাস্ত, সেই সঙ্গে পেট মোচড় দিয়ে ব্যথা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্প আম সংযুক্ত দাস্ত, সেসঙ্গে পেট ফাঁপা, হিক্কা বমি বমি ভাব, প্রস্রাবও সরলি হচ্ছে না, শিশু কিছুই খেতে চাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে পুদিনা পাতার রস ৮/১০ ফোঁটা অল্প একটু চিনি ও লবণ সহযোগে এক ঘণ্টা অন্তর কয়েকবার খাওয়াতে হবে। কখন কিভাবে কতবার খাওয়াতে হবে সেটা নির্ভর করবে রোগীর সুস্থতার ক্রমের দিকে লক্ষ্য রেখে। বয়স আনুপাতে মাত্রাটা ঠিক করে নিতে হবে।
৩. অরুচিতে: রোগে ভোগার পর, পেটে বাতাস জমে ও কোষ্ঠ বদ্ধতায় অরুচি আসে। একই রকম খাদ্য দীর্ঘদিন খেলে অরুচি আসে। এসব ক্ষেত্রে পুদিনার শরবত (পুদিনার রস ২ চা চামচ, সামান্য লবণ, কাগজী লেবুর রস ৮/১০ ফোঁটা, হাল্কা গরম পানি পোয়া খানিক একত্রে মিশিয়ে) সকাল বিকাল দিনে দুই বার ৫/৭ দিন খেলে অরুচি চলে যায়। পুদিনা পাতা বেটে পানিতে গুলে শরবত করা যায়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা পাতা ৮/১০ গ্রাম নিতে হবে।
৪. মূত্রাল্পতায়: অনেক রোগে প্রস্রাব কম হয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা গরমের ফলে সাময়িকভাবে অল্প অল্প প্রস্রাব হতে থাকে কোনো কোনো সময় দাহ হতে থাকে, সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ৮/১০ গ্রাম বেটে তাতে সামান্য লবণ ও কাগজি লেবুর রস ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে শরবত করে দিনে ২/৩ বার খেতে হবে। অন্য কোনো রোগে মূত্রাল্পতা হলে সে ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা যাবে কিনা সেটা নির্ভর করবে রোগের ধরনের ওপর এবং চিকিৎসকের বিচার ধারার ওপর।
৫. এন্টিক্যান্সার: পুদিনায় আছে মনোটারপিন নামক উপাদান। যা স্তন, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। নিয়মিত খেলে ফুসফুস, কোলন এবং ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৬. বমিতে: পিত্তে শ্লেষ্মার জ্বর, অম্লপিত্ত, আমাশয়, অজীর্ণ, উদরশূল প্রভৃতিতে বমি হতে পারে। আবার রোদে ঘোরাফিরা করে ঠাণ্ডা পানি খেলে, খালি পেটে থেকে পরিশ্রম করলে বমি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে পুদিনার শরবতের সঙ্গে এক চা চামচ তেঁতুল মাড় ও চিনি মিশিয়ে ২/৩ বার করে কয়দিন খেতে হবে।
৭. ঘাম নিয়ন্ত্রণে: যাদের শরীরে বেশি ঘাম হয় তারা পুদিনা পাতা ও গোলাপের পাপড়ি একসঙ্গে মিশিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে সেই পানির সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে বোতলে করে ফ্রিজে রেখে দিন। গোসলের পর সারা শরীরে লাগান।
৮. অ্যাজমা: পুদিনায় রোজমেরিক এসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না। এছাড়াও এ ঔষধি প্রোস্টসাইক্লিন তৈরিতে বাধা দেয়। তাতে শাসনালী পরিষ্কার থাকে।