জাতীয়

‘ফাতেমা ধান’ বিশ্বের সবচেয়ে ফলনশীল ধান!

By Daily Satkhira

May 19, 2018

ডেস্ক রিপোর্ট: বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নারীর চাষ করা ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একটি শীষে ধান পাওয়া গেছে এক হাজার এক শর বেশি। দেশে বর্তমান যেসব জাতের ধান চাষ হয় সেসবের চেয়ে এই ধানের ফলন দ্বিগুণ। শুধু দেশ নয়, বলা হচ্ছে পৃথিবীতে এর চেয়ে ফলনশীল ধান আর নেই। ফাতেমা বেগমের জমিতে এই ধানের চাষ হওয়ায় এরই মধ্যে তা ‘ফাতেমা ধান’ নামে পরিচিতি পেয়েছে এলাকায়। ওই ধান দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ফাতেমার বাড়িতে। ৪০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে সেই ধান।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এত অধিক ফলনশীল জাতের ধান বিশ্বের আর কোথাও আছে বলে তাদের জানা নেই। ফাতেমা বেগমের জমিতে উৎপাদিত ওই ধান সংগ্রহ করে সেটি কোন জাতের এবং কোথা থেকে কিভাবে এল—সেসব জানতে গবেষণার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।

বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামে ফলেছে এই ধান। ওই গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগমের (৬৫) কথামতো ছেলে লেবুয়াত শেখ (৪০) নিজেদের জমিতে ওই ধান চাষ করেন।

গতকাল শুক্রবার চাকুলিয়া গ্রামে ফাতেমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছু মানুষের ভিড় দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে তারা ফাতেমার ধানের বীজ কিনতে এসেছে। কেউ কেউ যে জমিতে ওই ধান ফলেছে, তা ঘুরে দেখে। তবে কয়েক দিন আগেই ওই ধানের বীজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।

ফাতেমা বেগম জানান, ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে তাঁর বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ দেখতে পান তিনি। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে প্রক্রিয়া করে বীজ হিসেবে রেখে দেন। পরের বছর ছেলে লেবুয়াতকে ধান চাষ চাষ করতে বলেন। সে বছর আড়াই কেজি ধান পাওয়া যায়। এবার আরো বেশি জমিতে চাষ করার পর ধানে ধানে সয়লাব হয়ে গেছে। সাড়া ফেলেছে তা এলাকার বাইরেও। ওই ধান দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো। লেবুয়াত শেখ জানান, বাড়ির পাশে দেড় বিঘার মৎস্যঘেরের মধ্যে প্রায় ৪২ শতক জমিতে আলাদাভাবে এ বছর ওই ধানের চাষ করেন তাঁরা। অন্য ধানের মতোই সাধারণ পরিচর্চা করেন। জমিতে দুই দফায় ২০ কেজি ইউরিয়া এবং ৩০ কেজি পটাশ সার ব্যবহার করা হয়েছে। পোকামাকড় তাড়াতে দুই দফায় কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। অন্য জাতের ধানগাছের চেয়ে এই ধানগাছ অনেক লম্বা। ধানের শীষও অনেক বড়। প্রতিটি শীষে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ দানা হয়। ওই জমিতে প্রায় দুই হাজার ৬০০ কেজি ধান ফলেছে। নিজেদের জন্য কিছু পরিমাণ বীজ ধান রাখার পর ৪০০ টাকা কেজিদরে ওই ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। তাতে আয় হয়েছে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা। সিলেট, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে ওই ধান ক্রয় করেছে। ফকিরহাটের মাসকাটা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী জানান, ওই ধান রোপণ করার পর তাঁরা তত্ত্বাবধান করেন। চাষি তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী ধান চাষ করেছেন।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বলেন, বোরো ধানের মৌসুমেই ওই ধান চাষ করা হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে ওই ধান কাটা হয়েছে। বীজপাতা তৈরি করার পর ১৫০ থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। যে মৎস্যঘেরের জমিতে ওই ধান চাষ করা হয়েছে তার পাশ দিয়ে পশুর নদী বয়ে গেছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ধান লবণাক্ততা সহনীয়। ওই জাতের প্রতিটি ধানগাছের দৈর্ঘ্য ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার, গুছি গড়ে আটটি, প্রতিটি ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, গড়ে দানার সংখ্যা এক হাজারের ওপরে। ফলন প্রতি হেক্টরে ১১ টনের বেশি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ওই ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। এত বেশি ফলন পাওয়া যায়, এমন কোনো জাতের ধান পৃথিবীতে আছে বলে তাঁর জানা নেই। তিনি জানান, ওই ধান লবণ সহ্যকারী এবং এ অঞ্চলের চাষের উপযোগী। মনে হচ্ছে, সারা দেশে ওই ধান চাষ করা যাবে।

আফতাব উদ্দিন বলেন, আফতাব-৫ নামে উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধানের মধ্য থেকে ওই ধান পাওয়া গেছে। কিভাবে ওই ধান এলো, কী জাতের ধান এবং ওই ধানের নাম কী—এসব জানতে চার থেকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর ফাতেমার জমিতে উৎপাদিত ওই ধান যদি সারা দেশে চাষ করা যায় তাহলে বার্ষিক উৎপাদন পাঁচ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।

যশোরের নওয়াপাড়া থেকে ধানের বীজ কিনতে আসা সজল ও অমিতাভ জানান, মানুষের মুখে মুখে শুনে তাঁরা অধিক ফলনের আশায় বীজধান ক্রয় করতে আসেন। কিন্তু তাঁরা আসার আগেই ওই বীজধান বিক্রি হয়ে গেছে।