নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রভাবশালী দলিল লেখকদের পক্ষ নিয়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকিতে সহযোগিতা করে লক্ষ টাকা আত্মসাত ও সাধারণ দলিল লেখকদের অহেতুক হয়রানিকরাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। এঘটনায় সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ৫৫জন দলিল লেখক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও এ প্রতিকারের বিষয়ে ঐক্যমত হয়ে স্বাক্ষর করেছেন। গত ৬ মে’১৮ তারিখে সাতক্ষীরা সদর দলিল লেখক সমিতির আয়োজনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন, সদর দলিল লেখক সমিতির আহবায়ক মোঃ খলিলুর রহমান। সভায় উপস্থিত সকল সদস্য জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রতিকারের দাবিতে স্বাক্ষর করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলাম দলিল লেখকদের সাথে অসাদাচরণ শুরু করেছেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলে এজলাসের সামনে অসাদাচরণের অভিযোগের আমাদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি প্রদান করেন। তবে জেলার ৭টি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ দলিল লেখকদের সাথে তার রয়েছে সক্ষ্যতা। তাদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এদিকে, চলতি সালের জানুয়ারি মাসে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ৪টি জমির শ্রেণি পরির্বতন করে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় দলিল লেখক মনিরুজ্জামান মনিকে সাময়িক বরখাস্ত করেন সাতক্ষীরা জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলাম। গত ২৮ জানুয়ারি’১৮ তারিখে ১৭৮ নং স্মারকের একপত্রে এ নির্দেশ দেন। এছাড়াও কেন তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে না এর সন্তোষজনক কৈফিয়ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে তথ্যানুসন্ধানের ওই ৪টি দলিলসহ মোট ১৪টি দলিলের শ্রেণি পরিবর্তনের অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখ মোঃ মনিরুজ্জামান মনি(সনদ নং ৯/২০০৬) ১২৯/১৫, ৯১৩৩/১৫, ৯৬৮/১৫, ২৫৩৯/১৫, ৯৪০৬/১৫, ৯১৬৯/১৫, ৯৪০৬/১৫, ১০১২৪/১৫, ১০৪৮৬/১৫, ১০৫৫৩/১৫, ৬১৫১/১৫, ৭১৮৮/১৫, ৭৩৯৯/১৫, ৭২১৯/১৫ ও ৮৬৪২/১৫ নম্বর দলিল গুলোর শ্রেণি পরিবর্তন (ডাঙ্গা শ্রেণির পরিবর্তে বিলান, বাস্তর পরিবর্তে ডাঙ্গা লিখে) লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজের পকেটস্থ করেছেন। তদন্তে প্রমাণিত হয়। যা রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ ধারা ৮০ জি অদীন প্রনীত দলিল লেখক(সনদ) বিধিমালার বিধি ১২ অনুসারে তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং শোকজ করা হয়। তারা আরো জানান, দলিলের শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে গেলে অবশ্যই জেলা রেজিস্ট্রারের সহযোগিতা লাগে। ওই ১৪টি দলিল ছাড়াও একাধিক দলিলের শ্রেণি পরিবর্তনের সাথে জেলা রেজিস্ট্রারের যোগসাজস রয়েছে। অথচ তিনি রয়েছেন ধরাছোয়ার বাইরে। সদর রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানাগেছে, দলিল লেখক মনি কর্তৃক শ্রেণি পরিবর্তনের ঘটনায় তাকে বহিস্কার ও জরিমানা করা হয়। কিন্তু বিধিমোতাবেক জেলা রেজিস্ট্রার ওই জরিমানার টাকা আদায়ে কালক্ষেপন করছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ মে’১৮ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদুক) এর কর্মকর্তারা বিষয়টির খোজ খবরও নিয়ে গেছেন। সদর দলিল লেখক সমিতির আহবায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম করে যাচ্ছেন। অফিসে আসা সাধারণ মানুষদের যান বাহন রাখার জায়গটিও তিনি লাল ফিতা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। সেখানে কেউ গাড়ী না রাখতে পেরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া অফিসটি এখন ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলামের সাথে শনিবার বিকাল ৪.৪৮ মিনিটে তার ব্যবহৃত ০১৮২৭ ১০০০৭১ নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তা সম্ভব হয়নি। অবিলম্বে ওই দুর্নীতিবাজ রেজিস্ট্রারের অপসারণ দাবি করেছেন।